ডিএমপি নিউজ : পবিত্র ঈদ-উল-আযহার নামাজের জামাত উপলক্ষে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পাঁচ স্তরের সুদৃঢ় ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম(বার), পিপিএম(বার)। এছাড়া রাজধানীর প্রতিটি ঈদ জামাতকে ঘিরে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় চারটি আলাদা পার্কিং ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিছু রাস্তায় ডাইভারশন দেয়া হবে।
আজ রোববার (১৬ জুন) সকালে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান ডিএমপি কমিশনার।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজধানীর প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। এই জামাতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, ঢাকাস্থ মুসলিম দেশের কূটনৈতিকবৃন্দ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নামাজ আদায় করবেন। সে জন্য এখানে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পাঁচটি জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রধান জামাতটি বাইতুল মোকাররমে স্থানান্তর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ঈদের প্রধান জামাতসহ রাজধানীর সকল মসজিদ ও ইদগাহে ঈদের জামাতকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদগাহ ও আশপাশের এলাকা ডিএমপির ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়াও ড্রোন পেট্রোলিং, সাইবার পেট্রোলিং ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক ইউনিফর্মধারী পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে জাতীয় ঈদগাহের চারপাশে বহিঃবেষ্টনী ও আন্তঃবেষ্টনী গড়ে তোলা হবে। প্রবেশ গেটে মেটাল ডিটেক্টর ও আর্চওয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। ইউনিফর্ম পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ, এসবি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সোয়াট টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট স্ট্যান্ডবাই থাকবে। এছাড়াও দুর্ঘটনা এড়াতে ফায়ার সার্ভিস ও তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবায় মেডিকেল টিম নিয়োজিত থাকবে।
যারা ঈদের জামাতে নামাজ পড়তে আসবেন তাদের প্রতি ডিএমপি কমিশনারের বিনীত অনুরোধ, আপনারা কোনো ধরনের দাহ্য বস্তু, বিস্ফোরক জাতীয় বস্তু ও ধারালো কিছু সঙ্গে নিয়ে আসবেন না।
তিনি আরো বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি, ঈদ ও ঈদ পরবর্তী সময়ে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে এক শ্রেণির উঠতি বয়সের যুবক বা কিশোর মোটরসাইকেল ও কার রেসে মেতে ওঠে। যার কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাদের প্রতি অনুরোধ রাখছি তারা যেন এভাবে মরণ খেলায় পতিত না হন। রাস্তায় বেরিকেড তৈরি করা হবে যাতে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে তারা এ ধরনের রেসিং করতে না পারে। এ থেকে সন্তানকে বিরত রাখতে অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান ডিএমপি কমিশনার। অন্যথায় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ২৫ লক্ষ পশু কোরবানি দেওয়া হবে। দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির পর বর্জ্য নিঃসরণের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমি নগরবাসীর প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি সিটি কর্পোরেশনের নিয়মকানুন মেনে কোরবানির বর্জ্য নিঃসরণে সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশকে সহায়তা করবেন। এছাড়া পশুর চামড়া সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে কাজ করবে। চামড়া যাতে পাচার হতে না পারে ও দালাল চক্র কোন অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য ডিএমপির প্রত্যেকটি থানা কেন্দ্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে নিকটস্থ থানাকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।
ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, প্রিয়জনদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা থেকে প্রায় এক কোটি মানুষ গ্রামের বাড়িতে গেছে। এই সময়ে বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত ফাঁকা থাকে। প্রতি বছরই পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়। এবারও পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সাংবাদিকদেরে অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় কোনো ধরনের জঙ্গি তৎপরতার তথ্য নেই। তারপরও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সব বিষয় বিবেচনায় রেখেই নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
কোরবানির চামড়া পাচার বন্ধে নেয়া ব্যবস্থা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা কেন্দ্রিক চামড়াগুলো হেমায়েতপুরে যাবে এবং বাইরের চামড়াগুলো সাত দিন পরে সাভারের হেমায়েতপুরে আসবে। চামড়াগুলো যাতে নষ্ট না হয়, প্রক্রিয়াজাত যাতে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায় ডিএমপির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ে যাতে কেউ সিন্ডিকেট তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে। চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ে চাঁদাবাজি বা কেউ প্রভাব বিস্তার করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাঁচা চামড়া পাচার রোধে ঢাকা থেকে বহিঃগমন পথগুলোতে বসানো হবে চেকপোস্ট ও পুলিশের টহল।
চাঁদাবাজির নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, অনেককেই গ্রেফতার করেছি।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খঃ মহিদ উদ্দিন বিপিএম-বার (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ মুনিবুর রহমান বিপিএম-সেবা; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার); যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণসহ এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।