মার্কিন সরকার টানা ৩৫ দিন আংশিক অচল হয়ে থাকার পর তীব্র চাপের মুখে অবশেষে নিজের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ছাড়াই সাময়িকভাবে তিনি খণ্ডকালীন বাজেট অনুমোদন করেছেন। এর ফলে আপাতত মার্কিন সরকারে অচলাবস্থার নিরসন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ ফেডারেল কর্মকর্তা আবারো তাদের বেতন-ভাতা পাবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন সরকারে ইতিহাসের দীর্ঘতম অচলাবস্থার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত হয়েছেন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নিজের দাবিতে অনড় থাকলেও অবশেষে তাকে নতি স্বীকার করতে হয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে ডেমোক্রেটরা সরকারে অচলাবস্থা কাটানোর জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি অব্যাহতভাবে অনুরোধ করে আসছেন। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে আলোচনায় বসার পূর্বেই তারা খণ্ডকালীন বাজেট অনুমোদন করার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান।
৫ সপ্তাহ ধরে নিজের অবস্থানে অনড় থাকার পর শুক্রবার তিনি ডেমোক্রেটদের কথামতো ওই বাজেট অনুমোদনে সম্মত হন। যদিও তা সীমিত সময়ের জন্য। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সরকারে যে অচলাবস্থা চলছে, ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তনের ফলে তা নিরর্থক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অথচ এর কারণেই লাখ লাখ ফেডারেল কর্মকর্তা বেতন-ভাতা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। প্রেসিডেন্টের ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতারা অচল হয়ে থাকা বিভিন্ন এজেন্সিগুলোকে সক্রিয় করতে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অচলাবস্থা নিরসনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে পাস হওয়া বিলে শুক্রবার রাতেই স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফলে ইতিহাসের দীর্ঘতম অচলাবস্থার অবসান ঘটে। পরে হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে কথা বলেন তিনি। তবে এসময় পরাজয় মেনে নেয়ার মতো মনোভাব দেখাননি তিনি। বরং এই সংকটকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আবারো অচলাবস্থা সৃষ্টির সতর্কবার্তা দেন। জানান, আইনপ্রণেতারা সীমান্তে নতুন দেয়াল নির্মাণে বরাদ্দ না দিলে আবারো সরকার অচল হয়ে পড়তে পারে। ট্রাম্প বলেন, আমার হাতে খুব শক্তিশালী বিকল্প রয়েছে। কিন্তু এখনই আমি তা ব্যবহার করতে চাই না। কংগ্রেস যদি এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়, তাহলে ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে সরকার আবারো অচল হয়ে যাবে। নয় তো সংবিধান অনুযায়ী জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা ব্যবহার করবো। যেন আমরা ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা লাভ করতে পারি। এদিন ট্রাম্পের বক্তৃতা শোনার জন্য মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্যই রোজ গার্ডেনে উপস্থিত ছিলেন। তারা হাত তালি দিয়ে প্রেসিডেন্টকে উৎসাহ জানান। সিএনএনের পৃথক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থা জারির একটি খসড়া ঘোষণাপত্র এরই মধ্যে প্রস্তুত করে রেখেছে হোয়াইট হাউস। ওই ঘোষণাপত্র কার্যকর করা হলে ট্রাম্প তার বহুল আকাঙ্ক্ষিত দেয়াল নির্মাণ প্রকল্পে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই নিজের ইচ্ছামতো শত শত কোটি ডলার অর্থ বরাদ্দ করতে পারবেন।