ডিএমপি নিউজঃ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে আমাদের জীবিকা নির্বাহের নানান পথ তৈরি হয়েছে প্রযুক্তি ব্যবহারে। বর্তমানে যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলেও কর্মসংস্থানের অভাবে চাকুরী পাওয়াটা মুশকিল। বর্তমানে জীবিকা নির্বাহের জন্য ফ্রিল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষরা চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই আয় করতে পারেন। আসুন জেনে নেয়া যাক বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিংয়ের জনপ্রিয় কাজগুলো কি কি।
গ্রাফিক্স ডিজাইনিং : আমাদের দেশেসহ বিশ্বি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর চাহিদা আকাশচুম্বী। ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজগুলোর একটি হলো গ্রাফিক্স ডিজাইনিং। বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য লোগো ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে বিজনেস কার্ড বা ব্রোশিয়ার ডিজাইনসহ বিভিন্ন কাজে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের এর চাহিদা এখন আকাশচুম্বী। কাজটি শিখতে অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর আর ফটোশপ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখেই এই সফটওয়্যারগুলো শিখে ফেলা সম্ভব।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট : ব্যবসা বানিজ্যের দ্রুত প্রচারের জন্য দরকার একটি ভালো মানের ওয়েব সাইট।প্রযুক্তির এই যুগে একটি ভালো ওয়েবসাইট ছাড়া কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তাই করা যায় না। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়েবসাইটটি তৈরির দায়িত্বটি দিয়ে থাকেন বিভিন্ন পেশাজীবী ওয়েব ডেভেলপারদের। আর তারা এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করেন একটি ভালো অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপুলসংখ্যক মানুষ ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।
এসইওঃ একটি ওয়েব সাইট সার্জ করলে আপনার ওয়েব সাইটের নামটি পেইজেরে উপরের সবার আগে আসার অন্যতম কারণ এসইও(সার্জ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন)।এ্যাডড্রেসটি আমরা যখন গুগলে কিছু লিখে সার্চ করি তখন রেজাল্ট হিসেবে একই বিষয়ের বিভিন্ন ওয়েবসাইটের একটি তালিকা এসে থাকে। এই তালিকায় কিছু ওয়েবসাইট থাকে ওপরে আর কিছু থাকে নিচে। খুব সহজ ভাষায়, পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সার্চ রেজাল্টের নিচের দিকের ওয়েবসাইটগুলোকে ওপরে তুলে আনার পদ্ধতিটিকেই বলা হয় এসইও অথবা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে এসইওর চাহিদা অত্যন্ত বেশি।
কনটেন্ট রাইটিং : আপনার যদি লেখার হাত ভালো থাকে তাহলে আপনি বিভিন্ন ওয়েব সাইটে কনটেন্ট লিখে অর্থ আয় করতে পারেন।আমরা যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ঢুকি তখন অনেক সময় বিভিন্ন সুন্দর কথা, কবিতা বা বিবরণ দেখতে পাই। এই কথাগুলো সাধারণত সেই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ নিজে লেখে না। তারা বিভিন্ন কনটেন্ট রাইটারকে দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে এগুলো লিখিয়ে নেয়। যাদের লেখার হাত ভালো এবং ব্যাকরণ সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে, তারা খুব সহজেই কনটেন্ট রাইটিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
ব্লগিং : ব্লগিং আমাদের দেশে অনেক পরিচিত একটি নাম। আপনি বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্লগিং করে ঘরে বসে আয় করতে পারেন। অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য ব্লগিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। কেউ সাহিত্য সম্পর্কে ভালো জানেন, কেউ বা ইতিহাস সম্বন্ধে। কেউ রাজনীতি সম্পর্কে ভালো জানেন, কেউ বা প্রযুক্তি সম্বন্ধে। আমাদের এই জ্ঞানগুলোকে লেখনীর মাধ্যমে অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েও জীবিকা নির্বাহ করা যায়। আর এই পদ্ধতিকেই বলা হয় ব্লগিং। একজন ব্লগার নিজের অথবা অন্যের ওয়েবসাইটে লেখার মাধ্যমে ব্লগিংয়ের কাজ করতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং : কোন নতুন পণ্য বাজারে আসলে দরকার তার প্রচার ও প্রচারণা। যাতে করে সহজে গ্রাহকের নিকট পণ্যের সেবা পৈাঁছায়ে যেতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া এখনকার দিনে বিভিন্ন পণ্যের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির একটি কার্যকরী মাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্য সম্পর্কে জনগণের মনোভাব অবলোকন করা, তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয়া অথবা বিভিন্ন মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালনার মাধ্যমে পণ্যের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করাই হলো এর কাজ। ফ্রিল্যান্সিং হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
অনুবাদ : আপনার যদি ভাষার উপর ভালো ও বিস্তর জ্ঞান থাকে। তাহলে এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আপনি বিভিন্ন ভাষা অনুবাদ করেও টাকা আয় করতে পারবেন। প্রতিদিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা বা লেখালেখি হচ্ছে। এই গবেষণা বা লেখাগুলো পৃথিবীর অন্যান্য ভাষাভাষী মানুষদের পৌঁছে দিতে অনুবাদের কাজ করা হয়। একাধিক ভাষাজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা ঘরে বসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে এই কাজগুলো করে দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকেন। কাজটি করতে ইংরেজিসহ অন্যান্য কিছু ভাষা ও ব্যাকরণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট : বর্তমান যুগ স্মার্ট ফোনের। স্মার্ট ফোনের বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপস দিয়ে নানান রকম সেবা নেয়া যায়। আর এই অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করে সহজে ঘরে বসে আয় করতে পারেন প্রচুর টাকা। মোবাইল ফোনের এই যুগে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মতো স্মার্টফোন অ্যাপের চাহিদাও আকাশচুম্বী। পেশাজীবী অ্যাপ ডেভেলপাররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকে। যেহেতু কাজটি একটু জটিল এবং এর চাহিদাও বেশি তাই এর থেকে উপার্জনের পরিমাণটাও বেশিই থাকে। বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট শেখানো হয়।
ডেটা এন্ট্রি : বিশ্বের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানান প্রজেক্টকে সামনে রেখে ডেটা এন্ট্রি করিয়ে থাকে। আপনি একটু সময় নিয়ে এই ডেটা এন্ট্রির কাজ করে ঘরে বসেই আয় করতে পারবেন। অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য সবচেয়ে সহজ কাজগুলোর একটি হলো ডেটা এন্ট্রি। বিভিন্ন তথ্য এবং উপাত্ত ইন্টারনেটে আপলোড করার মাধ্যমে ডেটা এন্ট্রি করা হয়। কাজটি সহজ হওয়ায় এতে উপার্জনের পরিমাণ খুব বেশি হয় না। তবে ভালো দিক হচ্ছে যে কোনো ব্যক্তি কোনো বিশেষ দক্ষতা ছাড়াই এ কাজ করে বেকারত্বের অবসান করতে পারবে।