ডিএমপি নিউজঃ মৃত্যু অবধারিত জেনেও সম্মুখযুদ্ধ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বীর বাঙালি৷ এ দুঃসাহস আমরা পেয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থেকে। যে শক্তিতে আমরা বলীয়ান। রাজারবাগের পুলিশও সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
আজ শনিবার (২৬ মার্চ ২০২২) বেলা ৩:৪৫ টায় রাজারবাগের বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন (বিপিএসএ) আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, মুজিববর্ষ স্মারকগ্রন্থ ‘অনশ্বর পিতা’র মোড়ক উন্মোচন এবং ‘রঙ তুলিতে আঁকি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ’ শীর্ষক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি; বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ও ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, অতিরিক্ত আইজিপি (এঅ্যান্ডও) ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী, বিপিএম(বার); ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার); র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি ও এসবির অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ মনিরুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান, পিপিএম (বার)।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের মূলমন্ত্রই ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি বক্তব্যই আমাদের হৃদয়ে গাঁথা ছিল বলেই আমরা স্বাধীন বাংলা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সফল হয়েছে বলেই আজ আমরা গর্বিত। তাই আমরা বঙ্গবন্ধুকে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে স্মরণ করি, স্মরণ করি বঙ্গমাতাকে।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করার প্রক্রিয়া চলছিল। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম মন খুলে আঁকতে পারছে, মনের ভাষা প্রকাশ করছে।
বিভিন্ন আন্দোলনে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, ১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে ৬৬, ৬৯, ৭১-সহ বিভিন্ন আন্দোলনে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিভিন্ন প্রকাশনায় এসব বিষয় উল্লেখ রয়েছে। তাই আপনাদের সবাইকে পুলিশের ইতিহাস পড়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।
আইজিপি আরও বলেন, দেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে পুলিশেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। দেশে সামাজিক স্থিতিশীলতা, শান্তি-শৃঙ্খলা পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশিরা এখন বিনিয়োগ করতে এখন সাহস পায়। কেউ যেন এটি ধ্বংস করতে না পারে এজন্য সজাগ থাকতে হবে বলে জানান আইজিপি।
বঙ্গবন্ধু এক অনন্য ব্যক্তিত্ব উল্লেখ করে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের অতিরিক্ত আইজিপি (এঅ্যান্ডও) ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী, বিপিএম(বার) বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা আমার নেই। যে বিশ্বাসটি সব সময় আমি বুকে ধারণ করি, সেটি হলো বঙ্গবন্ধু এসেছিলো বলেই আজ আমরা এখানে আছি। বঙ্গবন্ধু নেই তো আমরাও নেই।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তার সব গুণের মধ্যে একটি হলো সততা। বঙ্গবন্ধুর সততা নিয়ে কোনো দিন কেউ কোনো খারাপ কথা বলতে পারেনি পারবেও না। কারণ তিনি ছিলেন সৎ। কিন্তু বাংলাদেশে এই সততার অনেক ক্রাইসিস।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থেকেই দেশের আপামর জনতা সঠিক দিকনির্দেশনা পেয়েছিল। বাংলাদেশ পুলিশের যত সদস্য স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে আর কোন বাহিনীতে এককভাবে এতো সদস্যদের প্রাণ দিতে হয় নাই।
পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আরও গবেষণামূলক কাজ করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানান ডিএমপি কমিশনার।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের আত্মোৎসর্গ এর তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন এর সভাপতি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৭৫১ জন সদস্য শাহাদাত বরণ করার তথ্য বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকলেও প্রায় ১২শ পুলিশ সদস্য শাহাদাত বরণ করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।
তিনি আরো বলেন, শুধু মুক্তিযুদ্ধই নয় জাতীয় জীবনের প্রতিটি সংকটে পুলিশ সদস্যরা আইন শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত স্পেশাল ব্রাঞ্চের এএসআই সিদ্দিকুর রহমান নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের রক্ষার চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ খ্রীষ্টাব্দে বাংলাদেশ পুলিশকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকার কথা বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় তার বিভিন্ন লেখায়, আলোচনায় ও ভাষণে ব্যক্ত করেছেন। আমরা যারা বাংলাদেশ পুলিশে কাজ করি আমরা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তোমরা ব্রিটিশ পুলিশ নও স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশ আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রেখে জনসেবার মহান ব্রতকে ধারণ করে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ বিভিন্ন পুলিশ ইউনিট প্রধানগণ, পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে ছিল বিভিন্ন শিল্পীদের সমন্বয়ে দেশাত্মবোধক গান, বাংলাদেশ পুলিশ সাংস্কৃতিক পরিষদের দৃষ্টিনন্দন নৃত্য পরিবেশনা ও আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের আবৃত্তি।
উল্লেখ্য, গত ১৭ মার্চ ২০২২ (বৃহস্পতিবার) হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রাজারবাগের বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন (বিপিএসএ) এক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় কোমলমতি শিশুরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। ৬-৯ বছর, ৯-১৩ বছর ও ১৩-১৮ বছর পর্যন্ত তিনটি বিভাগে ভাগ করে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। আগামীর বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতার সংগ্রাম ও আদর্শের গল্প, শিশুদের মনে বঙ্গবন্ধু প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে শিশুদের রং তুলির আঁছড়ে।