ডিএমপি নিউজ: ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্বাধীনতার রূপকার। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অভিন্ন সত্ত্বা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আজ বুধবার (১৬ আগস্ট) বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক এ আলোচনা সভা ও কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার), পিপিএম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পরিচালক (এআইজি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম মানেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনের সোনালী ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু তাঁর ৫৫ বছরের জীবনকালের প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগই কারাগারে কাটিয়েছেন।বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন বাঙালি ও এই জনপদের জন্য উৎসর্গ করে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, আজ বাংলাদেশে যে উন্নয়ন কার্যক্রম তার ভিত্তি বঙ্গবন্ধুর হাতেই হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিগত এক দশকের অধিক সময় ধরে দেশের প্রত্যেক সেক্টরে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। বাংলাদেশ তথাকথিত বটমলেস বাস্কেট থেকে এশিয়ার ‘ইমার্জিং টাইগারে’ রূপান্তরিত হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামী প্রজন্মকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। উন্নত দেশের নাগরিক হওয়ার স্বপ্ন তোমাদেরকে বাস্তবায়ন করতে হবে। তোমাদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’।
মুখ্য আলোচক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে ভালবাসতেন, দেশের মানুষকে ভালবাসতেন। বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে পুলিশ সদস্যরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।তারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম বুলেট ছুঁড়েছিল। সেই বুলেটের শব্দ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে নেতৃত্ব শূন্য করা। নেতৃত্ব শূন্য করতে পারলেই পাকিস্তানি দোসররা এদেশকে আবার পাকিস্তানের অংশ করতে পারতো।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে তা বাস্তবায়ন করতে পারলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন আমরা তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সারথি হতে পারবো।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ ৭১-এর চেতনায় উজ্জীবিত। আমাদের পূর্বসূরী যারা ১৯৭১ সালে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে শহীদ হয়েছিলেন আমরা তাদের চেতনায় উজ্জীবিত। আমরা বারবার দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছি। ১৯৭১ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি, ১৯৭৫ সালে আমাদের এএসআই সিদ্দিকুর রহমান বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় বুকের রক্ত দিয়েছেন। ২০১২-১৩ সালের অগ্নিসন্ত্রাস ও ২০১৫-১৬ সালের জঙ্গিবাদ নিজেদের জীবন দিয়ে রুখে দিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৭১ থেকে সক্রিয় ছিল, এখনো আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাআল্লাহ।
অনুষ্ঠানে শহীদ এএসআই সিদ্দিকুর রহমানের পুত্র মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় আমার পিতা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বর্বর, নিকৃষ্টতম ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার জন্য দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় কর্তব্যনিষ্ঠার পরিচয় দিতে গিয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু শত্রুর সাথে আপোষ করেননি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঢাকায় বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত পুলিশ সদস্য ও সিভিল স্টাফদের সন্তানদের মধ্যে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
তিনটি ক্যাটাগরিতে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ক-গ্রুপ (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি), বিষয়- ৭ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১; খ- গ্রুপ (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি), বিষয়- বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং গ- গ্রুপ (একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি), বিষয়- বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’।
এছাড়াও, বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিটে কর্মরত পুলিশ সদস্য ও সিভিল স্টাফদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এএসপি থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য রচনার বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট পুলিশের ভূমিকা’, এসআই/সার্জেন্ট থেকে ইন্সপেক্টদের জন্য রচনার বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও বিচার: জাতির দায় মুক্তি’ এবং কনস্টবল, নায়েক ও এএসআইদের জন্য রচনার বিষয় ছিল ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’-তে পুলিশ। সিভিল স্টাফদের জন্য রচনার বিষয় ছিল- ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’।
অনুষ্ঠানে ‘দিশারী’ নামক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দায়িত্বরত অবস্থায় শহীদ এএসআই সিদ্দিকুর রহমানের পুত্র মুস্তাফিজুর রহমানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
আইজিপি অন্যান্য অতিথিদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।