বন্যায় ডায়রিয়ার পরেই সবচেয়ে বেশি যে স্বাস্থ্যগত সমস্যাটি ঘটে তা হলো টাইফয়েড। দূষিত পানি ও খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে সালমোনেলাটাইফি নামের এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করে টাইফয়েড রোগটি ঘটায়। একমাত্র খাবার পানি ও খাদ্যদ্রব্য ছাড়া এই জীবাণু অন্য কোনো মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ পায় না। জীবাণুটি এতটা ভয়াবহ যে, টাইফয়েডের রোগী ভালো হয়ে যাওয়ার পরেও রোগীর পিত্তথলিতে এ জীবাণু প্রায় এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং রোগীর মলের সাথে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। পানি ফুটিয়ে না খেলে কিংবা হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে দূষিত খাবার খেলে বা সেখান থেকে পানি খেলে অথবা রাস্তার পাশ থেকে ফুচকা বা চটপটি খেলে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
রোগের উপসর্গঃ রোগ-জীবাণু দেহে প্রবেশের সাধারণত দশ থেকে চৌদ্দ দিন পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। জ্বরই হলো এ রোগের প্রধান লক্ষণ। প্রথম চার-পাঁচ দিন জ্বর বৃদ্ধি পেতে থাকে। জ্বর কখনো বাড়ে কখনো কমে, তবে কোনো সময় সম্পূর্ণ ছেড়ে যায় না। জ্বরের সাথে মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। কারো কারো কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া ও বমি হয়। ২য় সপ্তায় রোগীর পেটে ও পিঠে গোলাপি রঙের দানা দেখা দিতে পারে। কারো কারো জ্বরের সাথে কাশি হয়।
রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত, কেননা টাইফয়েড থেকে পরবর্তী সময়ে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। টাইফয়েডের রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। জ্বর বেশি থাকলে পুরো শরীর ভেজা গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মুছে দিতে হবে। প্রয়োজনে কোল্ড স্পঞ্জিং করে দিতে হবে। রোগীকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। সেই সাথে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে। প্যারাসিটামল ওষুধ দিয়ে রোগীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। তবে চিকিৎসাক্ষেত্রে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করতে হবে। টাইফয়েড জ্বরে সাধারণত ১৪ দিন অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়, নতুবা জীবাণু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় না। জীবাণুটি পিত্তথলিতে অবস্থান নিয়ে পরবর্তী সময়ে পিত্তথলির অসুখ ঘটাতে পারে।
হ্যাঁ, স্বাস্থ্যগত সতর্কতা অবলম্বন করলে টাইফয়েড প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর জন্য যা করণীয় তা হলো:-
১. সব সময় ফোটানো পানি পান করা
২. বাসি খাবার না খাওয়া
৩. রাস্তার পাশ থেকে কোনো খাবার না খাওয়া এবং কাঁচা দুধ কিংবা কাঁচা ডিম কিংবা অর্ধ সিদ্ধ ডিম না খাওয়া।
৪. হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁয় খোলা অবস্থায় রাখা কোনো খাবার না খাওয়া
৫. টাইফয়েড প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করা
ঠিকমতো টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা করা না হলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। রোগীর সাধারণত যে সমস্যাগুলো ঘটতে পারে তা হলো:-
১. ক্ষুদ্রান্ত্রে রক্তক্ষরণ কিংবা ক্ষুদ্রান্ত্র ফুটো হয়ে যাওয়া (যাকে চলতি বাংলায় আমরা নাড়ি ফুটো হওয়া বলি)।
২. মেনিনজাইটিস, অস্থি ও অস্থিসন্ধিতে ইনফেকশন, পিত্তথলির প্রদাহ, কিডনির প্রদাহ, হূিপণ্ডের পেশির প্রদাহ।