বিভিন্ন জেলায় বন্যায় পাচঁ লাখ ৮৬ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানান, ২০ জেলার ৩৫৬ উপজেলা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯৭৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে তিন লাখ ৬৮ হাজার ৫৮৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার এই দুর্যোগ মাসখানেক স্থায়ী হতে পারে এবং শেষ না হওয়ায় পর্যন্ত সরকারের তৎপরতা চলবে।
সকালে রাজধানীর মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ তথ্য জানিয়ে আরো বলেন, ‘সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোণা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিসহ দেশের ৩৫৬টি উপজেলার ৩৫৮টি ইউনিয়ন বন্যা প্লাবিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যানের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, এখন পর্যন্ত ৯০টি পয়েন্টের মধ্যে ২৭টি পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এবং ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এবং মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়াও যেসব অঞ্চলে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে সেসব এলাকার সংসদ সদস্যরা ইতোমধ্যে এলাকায় চলে গেছেন এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয় সেভাবে প্রস্তুত নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
চলমান অর্থবছরে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বন্যা প্লাবিত এবং বন্যা হতে পারে এমন ৩৩টি জেলায় দশ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন চাল ও দুই কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা মোকাবেলায় আমরা ঘরে বসে নেই। জেলা প্রশাসকদের বলেছি তাদের চাহিদামত প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য ও আর্থিক বরাদ্দ দেয়া হবে। একটি লোকও যাতে খাবারের কারণে কষ্ট না পায় সেজন্য জেলা প্রশাসকদের সার্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানান, ‘বিভিন্ন স্থানে সাপের কামড়, পানিতে ডুবেসহ নানা কারণে ২০ জন মারা গেছে। আমরা প্রত্যেকটি জেলার বন্যা পরিস্থিতি সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত বন্যা ও ত্রাণ কার্যক্রমের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। আমাদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন।’
উজানের দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও ভূটানে এ বছর স্মরণকালের মারাত্মক বন্যা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘উজানের দেশে বন্যা হলে ভাটির দেশ হিসেবে উজানের প্রভাব আমাদের উপর পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। এর আলোকে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি এবং মানুষের জন্য সহনশীল রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘উত্তরাঞ্চল থেকে পানি নামার সময় মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মারদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, চাঁদপুর, রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও ভোলা জেলা প্লাবিত হতে পারে। পানি এলে ঢাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনাও আমরা দেখছি।’
বিগত বন্যা মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে উল্লেখ করে ত্রাণ মন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরণের মানসিকতা পরিহারের জন্য তাদের অনুরোধ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের ত্রাণ সমগ্রীর অভাব নেই। বন্যা পরিস্থিতি প্রলম্বিত হলেও ত্রাণ সমগ্রীর অভাব হবে না।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ জানান, উদ্ধারকারী যানবাহন ও নৌকা আগে থেকেই প্রস্তুত রাখতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জিআরের টাকা দিয়ে নৌকা কিনতে বলা হয়েছে। কয়েক জায়গায় উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, বিজিবি এবং সেনা বাহিনীর সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টন খাদ্যশস্য আনার প্রক্রিয়া চলছে, আরও খাদ্যশস্য আনা হবে।