ডিএমপি নিউজঃ ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’ এই শ্লোগানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের বর্ণিল আয়োজনের মধ্যদিয়ে পালিত হল ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০১৭’। এখন থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ শনিবার আনু্ষ্ঠানিকভাবে এ দিবস পালিত হবে।
বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মত আজ ২৮ অক্টোবর’১৭ সকাল ১০ টায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টাস থেকে দিবসটির উদ্বোধন শেষে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স হতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট, কাকরাইল গিয়ে শেষ হয়।
র্যালিটির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম। এ সময় তিনি বেলুন ও শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০১৭’ এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এই দিবস উপলক্ষে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট এ বাংলাদেশ পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট, কাকরাইল এ অনুষ্ঠানস্থলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এমপি, বিশেষ অতিথি আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম। সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম-বার, পিপিএম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন- পুলিশের সাথে কমিউনিটি পুলিশিং একত্রে কাজ করছে। বর্তমানে এলাকা বা মহল্লায় ছোটখাটো ঝগড়া বিবাদ মিমাংসা করছে কমিউনিটি পুলিশিং এর সদস্যরা।
নিজ এলাকার শান্তি শৃংখলা সুন্দর রাখতে ও অপরাধীদের ধরিয়ে দিতে কমিউনিটি পুলিশিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টির উৎস থেকে যদি কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে মিমাংসা করা যায় তাহলে মামলা মোকাদ্দমার জট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন- পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে আমরা পুলিশের গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি করছি। পুলিশের জন্য অর্থ খরচ কোন ব্যয় নয় বরং এটা বিনিয়োগ। কমিউনিটি পুলিশিং যত জনগনের কাছে যেয়ে তাদেরকে সম্পৃক্ত করে কাজ করতে পারবে ততটা সফল হবে এই কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা।
আইজিপি তাঁর বক্তব্যে বলেন- কমিউনিটি পুলিশিং জনগণের স্বার্থে। সারা দেশে প্রথমবারের মত আজ ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে’ পালন করা হচ্ছে। পুলিশের ভাল দিক ও আমরা যে দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি এই বার্তা পৌঁছে দেয়াই কমিউনিটি পুলিশিং এর মূল লক্ষ্য।
আমরা জেলা পর্যায়ে গিয়ে দেখেছি কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমে জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ। কমিউনিটি পুলিশিং কে টিকিয়ে রাখতে শুধু পুলিশ নয় জনগণকেও উদ্যোগী হতে হবে। পারস্পারিক আস্থাবোধ, শ্রদ্ধাবোধ ও সম্পর্কোন্নয়ন কমিউনিটি পুলিশিং এর মূল ভিত্তি।
তিনি আরও বলেন- নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধ থেকে কমিউনিটি পুলিশিং কাজ করছে। কমিউনিটি পুলিশিং সুষ্ঠুভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে নাগরিকদের মাঝে পুলিশ ভীতি কমে যাবে। মানুষ থানামুখী হবে, কমে যাবে অপরাধ।
ডিএমপি কমিশনার বলেন- সমাজের সকলকে একই প্লাটফর্মে এসে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজিসহ অন্যান্য অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আপনাদের অংশগ্রহণে বর্তমানে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা ভিত্তিতে পৌঁছেছে। থানার সেবার মান উন্নয়ন ও জনগণকে থানামুখী করা, পুলিশকে জনবান্ধব করার পরিবেশ সৃষ্টি করা কমিউনিটি পুলিশিং এর মূল কাজ।
এই নগরীর প্রত্যেক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে কাজ করে যাবে। আজকের এই ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০১৭’ তে অংশগ্রহণ করার জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবান ও কৃতজ্ঞতা জানান ডিএমপি কমিশনার।
স্বাগত বক্তব্যে উপ-পুলিশ কমিশনার রমনা মোঃ মারুফ হোসেন সরদার বলেন- কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা আধুনিক পুলিশিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শন। কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে সমাজ সেবায় পুলিশিং কাজে অংশগ্রহণ করানো যায়। বর্তমানে কমিউনিটি পুলিশিং সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন- আমার দীর্ঘ জীবনে দেখেছি ইংরেজদের আমলের পুলিশকে সৃষ্টি করা হয়েছিল মানুষকে দমনে। পাকিস্তান আমলেও এর পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখছি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পুলিশ এখন জনগণের পুলিশ, জনগণের বন্ধুতে রূপ নিয়েছে।
এবার ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে’ উপলক্ষে তিনটি ক্যাটাগরিতে কমিউনিটি পুলিশিং কাজে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২৪ জনকে পুরস্কার দেয়া হয়। ডিএমপি’র আটটি ক্রাইম বিভাগ থেকে শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য, শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং অফিসার ও শ্রেষ্ঠ বিট পুলিশিং অফিসার এই তিন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেয়া হয়।
এছাড়াও অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ধানমন্ডি থানার কমিউনিটি পুলিশিং সভাপতি এ্যাডভোকেট নাজমুল হাসান, রমনা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোখলেছুর রহমান, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমামসহ বাংলাদেশ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অন্যান্য থানার কমিউনিটি পুলিশিং সভাপতিগণ।