বাংলাদেশের নাফিস বিন যাফর দুই-দুইবার অস্কার জয় করেছেন। এবার তিনি বিচারক হতে যাচ্ছেন। সিনেমার ‘নোবেল’ খ্যাত একাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার পুরস্কার প্রদানকারী একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন নাফিস।
ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস বিভাগের অস্কারের জন্য ভোট মূল্যায়ন দেবেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে থমবারের মতো এ সম্মান পেলেন এই কৃতী সফটওয়্যার প্রকৌশলী।প্রতি বছর অস্কার ভোটিং পুলে নতুন সদস্য আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে একাডেমি। ২০১৭ সালে এতে অভিতাভ বচ্চন, আমির খান, সালমান খান, ইরফান খান, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, দীপিকা পাড়–কোন, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। বিভিন্ন বিভাগে ৫৭টি দেশের ৭৭৪ জন নতুন সদস্যের এ তালিকায় ওয়ান্ডার উইমেন খ্যাত গ্যাল গ্যাডেট থেকে শুরু করে ৯৫ বছর বয়সী অভিনেত্রী বেটি হোয়াইট রয়েছেন। রয়েছেন ক্রিস হেমসওয়ার্থ, ক্রিস উভান্স, ডোয়াইন জনসন-দ্য রক, ক্রিস প্যাট, আনা ফারিসের মতো তারকারা।
একাডেমির বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, নতুন আমন্ত্রিতরা আমন্ত্রণ গ্রহণ করলে কাডেমির এ সদস্যসংখ্যা হবে ৮ হাজার ৪২৭, যাদের ভোট মূল্যায়নে দেয়া হয়ে থাকে অস্কার পুরস্কার। নাফিস প্রথম বাংলাদেশী ব্যক্তি হিসেবে ২০০৭ সালে অস্কার পুরস্কার জেতেন। হলিউডের পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : অ্যাট ওয়ার্ল্ডস অ্যান্ড চলচ্চিত্রে ফ্লুইড অ্যানিমেশনের জন্য সায়েন্টিফিক অ্যান্ড নিক্যাল বিভাগে ডিজিটাল ডোমেইন নামে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ডেভেলপার কোম্পানির হয়ে দুই সহকর্মী ডাগ রোবেল ও রিয়ো সাকাগুচির সঙ্গে নাফিস এ পুরস্কার জিতেছিলেন।
এর পর ‘২০১২’ মুভিতে প্রথম ড্রপ ড্রেস্ট্রাকশন টুলকিট ব্যবহারের জন্য একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অব সায়েন্স ২০১৪ পুরস্কার পান তিনি। ওই ড্রপ ড্রেস্ট্রাকশন টুলকিটটি প্রথম ব্যবহার হয় ‘২০১২’ ছবিতে। এরপর ট্রান্সফরমারের প্রতিটি সিরিজ ও ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অগম্যান্ট’সহ ২০ টিরও বেশি ছবিতে এটি ব্যবহার করা হয়েছে।নাফিস ১৯৭৮ সালের ৮ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি। বাবা জাফর বিন বাশার বর্তমানে নিউইয়র্কে একটি অ্যাকাউন্টিং ফার্মে কর্মরত। আর মা নাফিসা জাফর গৃহিণী। তার দাদাবাড়ি রাজবাড়ী জেলার কাজীকান্দা। নানাবাড়ী বিক্রমপুরের টঙ্গিবাড়ী থানার রামপালে। বাবার চাকরি করার সুবাদে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বেড়ে উঠেছেন নাফিস। শৈশবে ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়েন। দেশে থাকার সময় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্ট্যান্ডার্ড সিক্স পর্যন্ত পড়ালেখা করেন তিনি।
বাবার এমবিএ পড়ার সুবাদে ১১ বছর বয়সে ১৯৮৯ সালে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনার চার্লসটনে চলে যান তিনি। সেখানে কলেজ অব চার্লসটন থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন। নাফিস জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সৈয়দ মইনুল হোসেন এবং বিডব্লিউআইটির সভাপতি ও সফটওয়্যার ডেভেলপকারী প্রতিষ্ঠান দোহাটেক চেয়ারম্যান লুনা সামছুদ্দোহার ভাগ্নে। বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ারের নাতি তিনি।