বিশ্বে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে, জোরালো হচ্ছে প্রবৃদ্ধি। আগামী বছর তা আরো শক্তিশালী হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
সংস্থার মতে, বিশ্ব প্রবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে তবে এ মুহূর্তে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। এ ঝুঁকি মোকাবেলায় অর্থনৈতিক সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে, যা দারিদ্র্য দূরীকরণে অত্যন্ত প্রয়োজন।সম্প্রতি প্রকাশিত আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এ বছর বিশ্ব প্রবৃদ্ধি বাড়বে ৩.৬ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে হবে ৩.৭ শতাংশ। এ সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বার্ষিক বৈঠকে বসছে আইএমএফ। এ বৈঠককে সামনে রেখেই প্রতিবেদনটি দেওয়া হলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আসবে ৭.১ শতাংশ, আগামী বছর তা কিছুটা কমে হবে ৭.০ শতাংশ। এ প্রবৃদ্ধি ২০২২ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
আইএমএফের গবেষণা পরিচালক মোরিস ওবস্টফেল্ড বলেন, গত বছরের শুরুতে যে চিত্র দেখা গেছে বর্তমান চিত্র তার থেকে ভিন্ন। তখন বিশ্ব প্রবৃদ্ধি কিছুটা হোঁচট খাচ্ছিল, অর্থবাজারও ছিল অস্থির।
কিন্তু বর্তমানে সেসব সমস্য অনেকটা কেটেছে। অর্থনীতি জোরালো করার সুযাগ তৈরি হয়েছে তবে সতর্কতা বার্তাও রয়েছে। বিশেষ করে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে, সেই সঙ্গে সভরেইন ঋণও বাড়ছে।সংস্থা জানায়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া ও সংঘাতের কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকায় প্রবৃদ্ধি দুর্বল হবে। বলা হয়, এখনো বিশ্বের প্রতি পাঁচটি দেশের মধ্যে একটিতে মাথাপিছু আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে।
আইএমএফ জানায়, উন্নত দেশগুলোতে এ বছর প্রবৃদ্ধি আসবে ২.২ শতাংশ, যা জুলাইয়ের পূর্বাভাসের চেয়ে ০.২ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি আসবে ৪.৬ শতাংশ। এ ছাড়া বিশ্ববাণিজ্য ও রপ্তানি বাড়ায় ইউরোজোনও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। এ বছর এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি হবে ২.১ শতাংশ। গত বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১.৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শক্তিশালী হচ্ছে। এ বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি আসবে ২.২ শতাংশ। যদিও আগামী বছর কিছুটা কমবে। এ বছর রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি আসবে ১.৮ শতাংশ। দেশটি তেলের বাজার পড়ে যাওয়ায় দুই বছরের মন্দা কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
চীনের প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে বিশ্বের দ্বিতীয়বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশটি ঋণের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও সতর্ক করে দেওয়া হয়। আইএমএফের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর চীনের প্রবৃদ্ধি আসবে ৬.৮ শতাংশ, যা আগের পূর্বাভাস ৬.৭ শতাংশের চেয়ে বেশি। বছরের প্রথমভাগে চীনের অর্থনীতি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে সে কারণেই পুরো বছরে ভালো করবে বলে মনে করে সংস্থা। সংস্থা জানায়, চীনের বিকাশমান অর্থনীতি এখনো এশিয়ায় চালকের আসনে রয়েছে, সেই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিকেও এগিয়ে দিচ্ছে।
আইএমএফ জানায়, জাপানসহ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশেরই প্রবৃদ্ধি বাড়বে, যদিও ভারতের কিছুটা কমবে। এ বছর জাপানের প্রবৃদ্ধি আসবে ১.৫ শতাংশ, যেখানে গত বছর প্রবৃদ্ধি ছিল ১.০ শতাংশ। অন্যদিকে এ বছর ভারতের প্রবৃদ্ধি আসবে ৬.৭ শতাংশ, যেখানে আগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল প্রবৃদ্ধি হবে ৭.২ শতাংশ। সংস্থা জানায়, বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ায় রপ্তানিনির্ভর এশিয়ার দেশগুলো লাভবান হবে।