উদ্যানে ছিলো রঙিন ফুলের বাগান। পাখি আর প্রজাপতি সেখানে উড়ে বেড়াতো সারাক্ষণ। মনোহর সেই বাগানটিকে অত্যাশ্চর্য বাগান বলা হয় শুধু একটি কারণে তা হলো- বাগানটিকে দূর থেকে দেখে মনে হতো হাওয়ায় ভাসছে। এটি ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান, যা প্রাচীন যুগের আকর্ষণীয় সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি।
কি ছিলো এই উদ্যানে- এটি নির্মাণের জন্য স্থাপন করা হয় বিশাল এক ভিত, যার আয়তন ছিলো ৮০০ বর্গফুট। ভিতের অবস্থান ছিলো তৎকালীন সম্রাটের খাস উপাসনালয়ের বিস্তৃত ছাদে। স্থাপনের পর ভূমি থেকে এর উচ্চতা দাড়িয়েছিল ৮০ ফুট। এই উচ্চতা থেকেই হয়তো ঝুলন্ত তকমাটি লেগে গিয়েছিলো।
৪ হাজার শ্রমিক রাতদিন পরিশ্রম করে তৈরি করেছিলো এই বাগান। বিশাল এই স্থাপনার ছিলো অনেকগুলো তলা, ছিলো বারান্দার মতো স্থান, সেসব স্থানে ছিলো ফুল, ছিলো গাছপালা। এর পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত ছিল ১০৫০ জন মালী। ৫ থেকে ৬ হাজার প্রজাতির ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছিলো এখানে। ৮০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত বাগানের সুউচ্চ ধাপগুলোতে নদী থেকে পানি উঠানো হত মোটা পেঁচানো নলের সাহায্যে।
ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যানের বর্ণনায় বলা হয়েছে, সম্রাট নেবুচান্ডেজার দ্বিতীয় এই হাওয়ায় ভাসমান শূন্য উদ্যানটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রথমে সম্রাট তার স্ত্রীর বিনোদনের জন্য মরুভূমির ভিতরেই একটি উদ্যান তৈরির কথা ভাবলেন। কিন্তু মরুভূমিতে গাছ বাঁচানো ছিলো কষ্টকর। কারণ সেখানকার পানির স্বল্পতা। কাজেই স্বাভাবিকভাবে সেখানে বাগান তৈরি করা ছিলো অসম্ভব। এজন্যই রাজা এক বিশেষ পদ্ধতিতে বাগান তৈরির পরিকল্পনা করলেন।
প্রথমেই তিনি পাহাড়ের মতো একটি জায়গা তৈরি করলেন। তারপর এই পাহাড়কে কয়েকটি তলায় ভাগ করে প্রতিটি তলার চারপাশে বারান্দা তৈরি করলেন। এই বারান্দাতেই নানা রঙের ফুল ও শোভবর্ধনকারী গাছ লাগানো হয়েছিলো। এই উদ্যানটি দেখলে মনে হতো যে গাছগুলো সব শূন্যে ভেসে আছে। মরুভূমিতে কোনো গাছ জন্মানো দুঃসাধ্য প্রায়। সেই জায়গায় এমন সুন্দর একটি বাগান তৈরি রীতিমতো আশ্চর্যের বিষয় ছিলো বৈকি।
এই বাগানটি অবশ্য অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কয়েক বছর আগে কিছু বিজ্ঞানী ব্যাবিলনের এই উদ্যানটির কিছু ভাঙা দেয়াল খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
নথিপত্র, মিথ যাই বলুন না কেন এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই ব্যাবিলন শহরে সত্যিই একটি শূন্য উদ্যান ছিল। কিন্তু সেটি কোথায়, কীভাবে হারিয়ে গেছে- এসব প্রশ্নের উত্তর নেই। এতো নিখুঁত বর্ণনার পরও বাস্তবে সেই শূন্য উদ্যানের কোনো নিদর্শই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে জানা যায়, পারস্য সম্রাট সাইরাস ৫১৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জেরুজালেম দখল করে শহরটি ধ্বংস করেন। তাদের উপাসনালয় এবং রাজপ্রাসাদ পুড়িয়ে দেন। তার সময় থেকেই ব্যাবিলনের সাম্রাজ্য ম্লান হতে থাকে। তার পরবর্তীকালে নেবোনিডাস সম্রাট হন। তবে ব্যাবিলনের সমৃদ্ধি হারিয়ে যেতে থাকে। পারসিয়ান সম্রাটের প্রচণ্ড আক্রমণে নিমিষেই ধুলোয় মিশে গিয়েছিলো ব্যাবিলন নগরী। খবর বাংলাদেশ জার্নাল।