ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল সংযুক্তা৷ ভারতের হায়দরাবাদের এক নামী কোচিং সেন্টারে সে ভর্তি হয়েছিল৷ ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবে৷ কিন্তু সংযুক্তার সেই আশা পূর্ণ হয়নি৷ সোমবার আত্মহত্যা করে সে৷ কারণ হিসেবে লেখে, পড়াশোনার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না৷ তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে৷
এমন একটা ঘটনা নয়৷ একের পর এক এমন ঘটে চলেছে দেশটির অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানায়৷ ৬০ দিনে রাজ্যগুলিতে মোট ৫০জন পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছে৷ গত ২ মাস ধরে এই ঘটনা ঘটছে৷ শিশু অধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের মতে পড়ুয়াদের মাথার মধ্যে ঠেসে দেওয়া হয়েছে পরীক্ষায় পাশ করতে হবে৷ তার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে তারা আত্মহত্যা করছে৷
সংযুক্তার বাবা পেশায় গাড়িচালক৷ তিনি জানিয়েছেন, পড়াশোনায় বরাবরই ভালো ছিল সংযুক্তা৷ ভালো নম্বরও পেত সে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সে বলত কোচিংয়ের পড়াশোনার সঙ্গে সে তাল মেলাতে পারছে না৷ “আমি অন্য বাবা মায়েদের বলব এমন কলেজে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করার সময় ভাবুন, তাদের মধ্যে কী চলছে৷” বলেছেন তিনি৷ তবে শুধু সংযুক্তার গল্পই এই রকম নয়৷ একটি ভিডিও–ও সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে৷ সেখানে দেখা গিয়েছে বিশাখাপত্তনমের একটি কলেজে এক শিক্ষক এক পড়ুয়াকে নির্দয়ভাবে লাঞ্ছিত করছে৷
বুধবার ঘটনার সুরাহা করার জন্য দুটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়৷ প্রথমটি নেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু৷ জুনিয়র কর্পোরেট কলেজের ম্যানেজারদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন৷ তাদের বিষয়গুলি নিষ্পত্তি করতে বলেন৷ এই নিয়ে রাজ্যও একটি নতুন নিয়ম চালু করেছে৷ নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, ৮ ঘণ্টার বেশি কোনও পড়ুয়া ক্লাস করবে না৷ শিক্ষক শিক্ষিকাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের মৌখিক বা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা যাবে না৷ এর জন্য তাদের কাউন্সিলিং করতে বলা হয়েছে৷
শিশু অধিকার কর্মী অচ্যুত রাও বলেছেন, এই ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফৌজদারি মামলা দায়ের হতে পারে৷ শিক্ষক শিক্ষিকাদের উচিত শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া৷ তাদের মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা নয়৷ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলেই তারা বুঝতে পারবে৷
গত মাসে ১৭ বছরের এক ছাত্র ৫ তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে৷ অভিযোগ, তার শিক্ষক তাকে অপমান করেছিল৷ ওই ছাত্রের সঙ্গী জানিয়েছিল, শিক্ষক তাদের বলেছেন, তারা নাকি পড়াশোনা করে না৷ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়৷
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বীরভদ্র কান্দলা বলেন, দোষ শুধু শিক্ষক শিক্ষিকাদের নয়৷ আজকাল বাবা মায়েরাও ছেলেমেয়েদের পরীক্ষায় পাশ করার জন্য অতিরিক্ত চাপ দিচ্ছেন৷ “স্কুল ও কলেজকে দোষ দেওয়া সহজ৷ কিন্তু বাবা মায়েদের কী বলবেন?” প্রশ্ন তুলেছেন তিনি৷
দেখা গিয়েছে, দেশটির অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানার ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার রেকর্ড ভালো৷ কিন্তু যখনই কোনও প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার প্রসঙ্গে আসে, সমস্যা তখনই তৈরি হয়৷ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অন্যদের ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে৷ ২০১৬–১৭ সালে এই ধরনের পরীক্ষায় ৬ হাজার ৭৪৪ জন ছাত্রছাত্রী পাশ করেছিল৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই সাফল্যের গল্প বাবামায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের উপর চাপ দেন৷ এমনকী যাদের যোগ্যতা নেই, তাদেরও উপরও চাপ সৃষ্টি করা হয়৷ ফলে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে৷