বন্যায় এখন পর্যন্ত দেশের ৩৩ জেলার চার লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এসব এলাকার সদ্য রোপণ করা আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ পরিস্থিতিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বন্যাকবলিত এলাকায় ভাসমান ধাপে তৈরি করা হচ্ছে আমন চারা। ভাসমান ধাপে বীজতলা (বেড) তৈরি করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ বীজতলায় তৈরি করা আমন চারা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। বন্যার পানি নেমে গেলেই এ চারা রোপণের মাধ্যমে আমন আবাদ করতে পারবেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ৩৩ জেলার মোট আবাদি জমি ২৬ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে এবার বন্যার কবলে পড়েছে চার লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোপা আমনের জমি, চার লাখ ৬২ হাজার হেক্টর। এ ছাড়া পাঁচ হাজার ৩২৩ হেক্টরে আমন বীজতলা, আট হাজার ৫৭০ হেক্টর জমির শাকসবজি, চার হাজার ৪৩৯ হেক্টরের বোনা আমন এবং প্রায় আট হাজার হেক্টর জমির আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, বন্যার ক্ষতি পোষাতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বন্যাকবলিত এলাকায় ভাসমান ধাপে বীজতলা তৈরি করে আমনের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে।
পানি কমলে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে এসব চারা বিতরণ করা হবে। বিএডিসি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এসব বীজতলা তৈরি করছে। এতে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেরাও ভাসমান ধাপে বীজতলা তৈরি করছেন। বন্যার পানি আগামী ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকলে সেসব এলাকায় ধানের চারা রোপণ করে ভালো ফলন পাওয়া যাবে না। সেসব এলাকার কৃষকদের জন্য বিনামূল্যে বীজ ধান সরবরাহ করা হবে। তারা ছিটিয়ে তা বপন করবেন। এ ছাড়াও যেসব এলাকায় বন্যা আরও দীর্ঘ হবে সেসব এলাকায় কৃষকদের সবজি ও ডালজাতীয় শস্যের বীজ দেওয়া হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বন্যাকবলিত ও জলমগ্ন এলাকায় আমন ধানের ভাসমান বীজতলা তৈরি করে সফল হয়েছে। গোপালগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় নতুন এ পদ্ধতিতে ধানের চারা তৈরি করা হয়। কচুরিপানা ও জলজ আগাছা ধাপে ধাপে সাজিয়ে তৈরি করা হয় ভাসমান বীজতলা। এ বীজতলায় আমনের চারা তৈরি করায় জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর কিংবা ডুবো জমি জেগে ওঠার পরই ২০ থেকে ২৫ দিন বয়সী চারা মূল জমিতে রোপণ করতে পারছেন কৃষক।