সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে গ্রুপের শেষ খেলায় বাংলাদেশ ৩-০ গোলে ভুটানকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে।
ফাইনালে কোন দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ লড়াই করবে সেটা নির্ধারণ হবে আজ। নেপালের কাঠমান্ডুতে আজ ছোটদের সাফে নেপাল ও ভারতের লড়াইয়ে নির্ধারণ হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। নেপাল ও ভারত এরই মধ্যে সেমিফাইনালে উঠে গেছে। কারণ নেপাল এবং ভারতের কাছে হেরে মালদ্বীপ বিদায় নিয়েছে। বাংলাদেশ ধারণা করছে ভারত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে। তাই যদি হয় তাহলে বাংলাদেশের হিসাবে শুক্রবার প্রথম সেমিফাইনালে নেপালকে মোকাবিলা করবে। তবে বাংলাদেশের ক্ষুদে ফুটবল দল ভারতকে এড়াতে চাইছে। নেপালকে চায় সেমিফাইনালে।
সেমিতে কাকে প্রতিপক্ষ পাচ্ছে বাংলাদেশ, সেটা এই মুহূর্তে নেপালে অবস্থানকারী খেলোয়াড়দের কাছে বড় নয়। তাদের কাছে ভুটানকে হারানোটাই সবচেয়ে বড় কথা। ভুটানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ফুটবলের কলঙ্কের একটি ম্যাচ। গত বছর ১০ অক্টোবর ভুটানের থিম্পুতে ভুটানের কাছে হেরে মামুনুল ইসলাম, এমিলি, তপু বর্মণ, মিশু, হেমন্ত, শাখাওয়াত রনি, সোহেল রানা, মামুন খান, মামুন মিয়া, জুয়েল রানারা পুরো দেশের ফুটবলে সামলোচনার ঝড় তুলে দেন। সেই ঝড়ে দেশের ফুটবল ঝাঁকুনি খেয়েছে। আজও সমালোচনা থামেনি। প্রায় ১১ মাস হয়ে গেছে। কিন্তু সমালোচনা শেষ হয়নি। হয় তো এমিলি, মামুনুলদের মুখে কখনো ভুটান হারের ঘটনা শোনা যায় না। তারপরও ফুটবলের যে কোনো প্রসঙ্গে ভুটান কলঙ্কের কথা উঠে আসে। বড়রা এরপর আর ভুটানের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পায়নি। ছোটদের খেলা হলেও বড়দের সেই হারের পর গতকালই প্রথম ভুটানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। জয়ের হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
গতকাল নেপালে ভুটানের বিপক্ষে খেলার আগে টিম মিটিংয়ে বড়দের ভুটান বিপর্যয়ের কথা বার বার ঘুরে ফিরে আসে। দলের কোচ পারভেজ বাবু কাল খেলা শেষে ঢাকায় ফোনে সংবাদ মাধ্যমকেও জানিয়েছেন তাদের মধ্যে নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ক্ষুদে ফুটবলারদের মনের মধ্যে বীজ বপন করে দেওয়া হয়েছে। বড়দের হয়ে প্রতিশোধ নাও। যেভাবেই হোক জিততে হবে। ফুটবলারদের মধ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার কথাটা বলা হয়েছে। বাচ্চাদের মধ্যে দেওয়া হয়েছিল শোধ নিতে হবে।’
ভুটানের জাপানি কোচ। তারাও ভালো খেলেছে। তবে বাংলার ছেলেদের ফুটবলে ঝাঁঝ ছিল বেশি। আক্রমণ করেছে গোলের সুযোগ তৈরি করেছে বেশি। তিন গোল করলেও পারভেজ বাবু জানিয়েছেন তিনটি চেষ্টা পোস্টে লেগে ফিরে এসেছে। কোচের বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪-০ গোলে জিতলেও সেই খেলার চেয়ে কালকে ভুটানের বিপক্ষে বেশি ভালো খেলেছে। আমার কাছে সেটাই মনে হয়েছে। আমার ছেলেরা প্রেসিং করে খেলেছে।’
প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল বাংলার ছেলেরা। ২৫ মিনিটে ফয়সাল গোল করে। একক চেষ্টা বল নিয়ে ঢুকে ভুটানের গোলকিপার তেনজিন দর্জির মাথার উপর দিয়ে ফয়সাল বল জালে রাখেন ১-০। ফয়সাল সূচনা করলেও বাংলাদেশের ক্ষুদে ফুটবল দলের জয়ের নায়ক মিরাজ মোল্লা। অপ্রতিরোধ্য ছিল মিরাজ মোল্লা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল পেয়ে যায় মিরাজ মোল্লা। ৫২ মিনিটে মিনহাজুল করিম স্বাধীনের আলতো বাড়ানো বলে হেড করে গোল করেন ২-০। ২ গোলের পরও যশোরের শামসুল হুদা ফুটবল একাডেমির মিরাজ গোলে সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। ৮০ মিনিটে শেষ গোলটিও করে মিরাজ ৩-০। আনফা টিভিতে দেখা গেল ১৫ বছরের ছেলে মিরাজ শেষ গোলটি করেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো গোল উদযাপন করে। রোনালদো তার প্রিয় ফুটবলার বলেই হয় তো মিরাজও গোলের পর রোনালদোর মতোই করল।
সামিউল বাশার, নাজমুল বিশ্বাস (রনি কুমার), ইয়াসিন আরাফাত, জিহাদ হোসেন, সাদেকুজ্জামান ফাহিম, আক্কাস আলী (মজিবর রহমান জনি), রাজা শেখ, মিনহাজুল করিম স্বাধীন, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, উজ্জ্বল হোসেন, মিরাজ মোল্লা।