ডিএমপি নিউজ : রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে ভুয়া ডিবি ও র্যাব পরিচয়ে মাইক্রোবাসযোগে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৭ দুর্ধর্ষ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ডাকাত দলের নেতা মোঃ জালাল উদ্দিন ওরফে ক্যাপ্টেন জালাল, সেকেন্ড ইন কমান্ড মোঃ বাদল হোসেন শেখ ওরফে বাদল মাঝি, সাঈদ মনির আল মাহমুদ, মোঃ খোকন, শাহদাত হোসেন, মোঃ বাবুল ও মোঃ মহিদুল ইসলাম শেখ। এসময় তাদের হেফাজত থেকে ১টি খেলনা পিস্তল, ৭টি র্যাবের জ্যাকেট, ১টি ডিবির জ্যাকেট, হাতকড়া ১ জোড়া, ওয়াকিটকি ২টি, ব্যাটন ২টি, পুলিশ লেখা ব্যাগ ১টি, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ১টি, ৯টি মোবাইল ফোন ও নগদ ২৪০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গত শনিবার রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিম। আজ রবিবার (১৬ এপ্রিল ২০২৩) দুপুরে ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রথমে মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ইত্যাদিতে খোঁজ নিয়ে অধিক পরিমাণ নগদ অর্থ বহনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করে। পরে ডাকাত দলের সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তির অবস্থান, বাসস্থান এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্র সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর তারা টার্গেটকৃত ব্যক্তির নিকট হতে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য স্থান নির্ধারন করে কয়েকবার মহড়া দেয়। এই ডাকাত দল সাধারণত চিটাগাং রোড থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত মহাসড়ককে ডাকাতি করে থাকে। ডাকাত দল তারিখ ও সময় নির্ধারন করে ৩টি গ্রুপে ভাগ হয়। নির্ধারিত দিনের একদিন আগেই দলের প্রত্যেক সদস্য তাদের ব্যক্তিগত ফোন বন্ধ করে দেয়। এই সময় দলনেতা মোঃ জালাল উদ্দিন ওরফে ক্যাপ্টেন জালাল প্রত্যেক গ্রুপে নতুন সিমসহ একটি করে বাটন মোবাইল ফোন প্রদান করে এবং ডাকাতি শেষ হলে তা ফেরত নিয়ে নেয়।
ডাকাতির কৌশল সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ১ম গ্রুপের সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে নির্ধারিত দিনের একদিন আগে থেকে অনুসরণ করে। ২য় গ্রুপের সদস্যরা একটি গাড়িসহ একদিন আগেই ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানের নিকটে একটি ভাল মানের হোটেলে ডিবি বা ব্যার পরিচয় দিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে। এই দলে র্যাবের পোশাক, ওয়াকিটকি, হাতকড়া, খেলনা পিস্তলসহ আইন-শৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি থাকে। ১ম গ্রুপ সিগনাল দিলে ২য় গ্রুপ টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে আটক করে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তাকে নির্জন কোন স্থানে ফেলে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী প্রচন্ড শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। ৩য় গ্রুপের সদস্যরা ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানের দূরবর্তী অন্য একটি স্থানে একটি হোটেলে অবস্থান করে। এই দলের কাজ হলো ২য় গ্রুপ মিস করলে তারা ডাকাতির কাজটা শেষ করা।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ডাকাত দলের নেতা মোঃ জালাল উদ্দিন নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন জালাল হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে সে সেনাবাহিনীর চাকুরিচ্যুত সদস্য। ডাকাতরা আগের ২টি ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে। একটি হলো নারায়ণগঞ্জের মোগড়াপাড়া থেকে ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ডাকাতি, দ্বিতীয়টি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মহাসড়ক থেকে ২৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ডাকাতি।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের রামপুরা থানার রুজুকৃত মামলায় বিজ্ঞ আদালতে পেরণ করা হয়েছে।