দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এখন অবিচ্ছেদ্য এক গ্যাজেট হয়ে উঠেছে স্মার্টফোন। কথা বলার পাশাপাশি আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা বা নগরের অপরিচিত এলাকায় রাস্তা খুঁজে বের করা থেকে শুরু করে সময় কাটানোর জন্য গেম খেলা, ফেসবুকিং পর্যন্ত— সব কাজেই ব্যবহার হচ্ছে স্মার্টফোন। আমাদের জীবনযাত্রায় স্মার্টফোন ব্যবহার করা বা এর সহায়তা নেয়া যায় না, এমন ক্ষেত্র এখন খুঁজে বের করা মুশকিল। সর্বসংকটের ত্রাতা এ স্মার্টফোন আবার একই সঙ্গে হয়ে উঠছে আমাদের বড় আরেক সংকটের কারণ। অতিমাত্রায় স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে ভোঁতা হয়ে আসছে আমাদের মস্তিষ্ক। কমছে স্মরণশক্তি ও শেখার আগ্রহ এবং প্রবণতা। স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার ধার কমাচ্ছে মানবজাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ বুদ্ধিমত্তার। খবর ডেইলি মেইল।
নিউরোসায়েন্টিস্ট সুসান গ্রিনফিল্ডের ভাষ্য অনুযায়ী, এখনকার প্রজন্মের কাছে কোনো সমস্যার সমাধান নিজে খুঁজে বের করা বা জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দিয়েছে প্রযুক্তির অতিব্যবহার।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির লিংকন কলেজের এ রিসার্চ ফেলোর দাবি, স্মার্টফোনের কল্যাণে সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয় (আঙুলের ডগায়!) চলে আসার কল্যাণে কারো নাম বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তারিখ মনে রাখার বিষয়টি এখন গুরুত্ব হারিয়েছে। ফলে এসব বিষয়ে মাথা খাটানোর কোনো তাগিদও থাকছে না। বিপরীতে তথ্য বিষয়ে মস্তিষ্কের আইনই হলো, ‘হয় মাথা খাটাও, নয় ভুলে যাও।’ এ মাথা না খাটানোর চর্চার কারণেই আমাদের মস্তিষ্কও এখন তথ্য সংরক্ষণের সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছে।
অভিজাত একজন ব্যারনেস হিসেবে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডসে বক্তব্য রাখার সময় সুসান গ্রিনফিল্ড দেশটির সমাজের সর্বস্তরে ডিজিটালাইজেশনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘বাস্তবজগতে খেলাধুলা, শেখা ও সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনের সময়টাকে গিলে খাচ্ছে স্ক্রিনভিত্তিক দুনিয়া।’
এ সময় প্রজন্মের চিন্তাভাবনার জন্যও স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠার প্রবণতার সমালোচনা করেন গ্রিনফিল্ড। তার বিশ্বাস, তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি নির্ভরতা এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জটিল ও নিজস্ব যুক্তিনির্ভর আচরণের অর্থপূর্ণতার ওপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।-বণিক বার্তা