জঙ্গলমহলের মাওবাদী সমস্যার জন্য তৃণমূল সরকার দোষে বাম-জমানাকে। তৃণমূলের আমলে রাজ্যের জঙ্গলমহলে পরিস্থিতি বদলেছে বলে দাবি করেন শাসকদলের বহু ছোট-মেজো-বড় নেতা-নেত্রী। কিন্তু মঙ্গলবার পুরুলিয়া শহরে এমন এক মাওবাদী নেতা আত্মসমর্পণ করলেন, যিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরে, স্কোয়াডে ফের চলে গিয়েছিলেন ২০১৩-র গোড়ায়।
তৃণমূল সরকার প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার দেড় বছরের মধ্যে।ধরা দেওয়া এই মাওবাদী নেতার নাম হাজারি হেমব্রম ওরফে বিজয়। ৩২ বছরের হাজারির সঙ্গে তাঁর প্রেমিকা, ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার গুরাবাঁধা অঞ্চলের বাসিন্দা রানি মুণ্ডাও এ দিন আত্মসমর্পণ করেছেন। দু’জনে দু’টি রাইফেল-সহ ধরা দিয়েছেন। দু’জনকে জলপাই রঙের পোশাকে এ দিন পুরুলিয়া পুলিশ লাইনে হাজির করানো হয়। বছর বাইশের রানি ছিলেন দলমা স্কোয়াডের সদস্য। হাজারি যে স্কোয়াডের ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন বলে পুলিশের দাবি। সে দিক থেকে, এ-ই প্রথম এমন এক জন ধরা দিলেন, যিনি তৃণমূল আমলেই নতুন করে জঙ্গলের জীবন ও হাতিয়ার তুলে নিয়েছিলেন। সেটা অবশ্য ঝাড়খণ্ডে। কিন্তু এই জমানার প্রথম দফায় যে তাঁর রাজনৈতিক মত ও পথ বদলায়নি, পুলিশের দেওয়া তথ্যই তার প্রমাণ।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘হাজারি হেমব্রম সম্প্রতি মাওবাদী দলের বাংলা-ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড বর্ডার রিজিওনাল কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কাজ করছিলেন।পুলিশ জানাচ্ছে, পুরুলিয়ার বলরামপুর এলাকার ঘাটবেড়া-কেরোয়া অঞ্চলের মাহুলিটাঁড় গ্রামের বাসিন্দা হাজারি ২০০৬ সালে মাওবাদী দলে যোগ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে পুরুলিয়া জেলায় নাশকতার গোটা দশেক মামলা রয়েছে। অযোধ্যা স্কোয়াড যখন পুরোদমে নাশকতার কাজ চালাচ্ছে, সেই সময় হাজারি তার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১০-এ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন হাজারি। ২০১২-র অক্টোবরে জামিনে মুক্তি পেয়ে হাজারি কিছু দিন মাহুলিটাঁড়ের বাড়িতেই ছিলেন। চাষবাস করে তিনি দিন কাটাচ্ছিলেন।
তবে ২০১৩-র গোড়ায় ওই এলাকায় মাওবাদীদের পোস্টার পড়ার পরে পুলিশের নজরে আসে, হাজারি এলাকায় নেই। সেই থেকে তিনি বেপাত্তা ছিলেন।পরে গোয়েন্দারা খবর পান, হাজারি ফের মাওবাদী দলে ফিরে গিয়েছেন। তখন তিনি দলমা স্কোয়াডের গুরুত্বপূর্ণ পদে। হাজারির প্রেমিকা রানির ভাই অর্জুন মুণ্ডা মাওবাদীদের গুরাবাঁধা স্কোয়াডের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, যিনি একদা বেলপাহাড়িতে সক্রিয় ছিলেন। ঝাড়খণ্ডে রানির বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা আছে।পুলিশ জানাচ্ছে, দলমা স্কোয়াড কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ায় হাজারি ও রানি নিরাপদ জীবনের খোঁজ করছিলেন। এমন গোয়েন্দা-তথ্য পেয়ে যৌথবাহিনী ওই দু’জনের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিতে থাকে।
এসপি বলেন, ‘‘ওই দু’জন সম্পর্কে আমাদের এবং সিআরপি-র কোবরা বাহিনীর কাছে কিছু তথ্য এসেছিল।বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুদীপ মাহাতো অবশ্য বলেন, ‘‘মাহুলিটাঁড় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে হাজারিই ছিল সাবেক অযোধ্যা স্কোয়াডের শেষ সদস্য। ওর আত্মসমর্পণে আমরা খুশি।’’