মারা গেলেন আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ। তাঁর পরিবারের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, দীর্ঘ রোগ ভোগের পর শুক্রবার মৃত্যু হয় ৪১ তম মার্কিন প্রেসিডেন্টের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
বেশি কিছু দিন ধরেই বয়সজনিত কারণে নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। কয়েক বছর আগে পার্কিনসন্সের আক্রান্ত হয়ে হুইলচেয়ার নিতে হয় তাঁকে। জানা যায়, গত এপ্রিলে স্ত্রী বারবারা বুশের মৃত্যুর পর রক্তে প্রবলভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় সিনিয়র জর্জ বুশকে বেশ কয়েক বার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। মৃত্যুকালে রেখে গেলেন তাঁর ৫ সন্তান, ১৭ জন নাতি-নাতনি, ৮ প্রপৌত্র-প্রপৌত্রী এবং দুই ভাই। শুধুমাত্র পাশে ছিলেন না তাঁর দীর্ঘ ৭৩ বছরের সঙ্গী বারবারা।
‘বুশ ৪১’ নামে পরিচিত এই রিপাবলিকান নেতার জীবন ছিল বর্ণময়। মার্কিন নৌসেনার বিমান চালক থেকে মার্কিন সেন্ট্রাল ইন্টিলেজেন্সের ডিরেক্টর, দু’দুবার ভাইস প্রেসিডেন্ট, তার পর রোনাল্ড উইলসন রেগানের মতো জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টকে পরাজিত করে ১৯৮৯ সালে ৪১-তম প্রেসিডেন্ট হওয়া ছিল মার্কিন ইতিহাসে ‘নতুন পাতার’ মতো। তাই, প্রেসিডেন্ট হয়ে বুশ বলেছিলেন, আমি একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছি, নতুন বাতাস বয়ে এনেছি, ঝরা পাতার মতো পুরনো ভাবনা ঝেড়ে ফেলে আমেরিকাকে নতুন সম্ভবনার পথে নিয়ে যেতে এসেছি।
বুশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই সবেমাত্র বার্লিন দেওয়াল ভেঙেছে। ১৯৯১ সালে ভেঙে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন-ও। বিশ্ব রাজনীতিতে এমন টালমাটাল পরিস্থিতিতে অত্যন্ত সন্তর্পণে নিজের দেশকে পরিচালনা করেন বুশ। এমনটা বলা হয়, মার্কিন ইতিহাসে অন্যতম ‘ওয়েল প্রিপেয়ার্ড প্রেসিডেন্ট’ ছিলেন তিনি। বিদেশনীতিতে বুশের ক্ষুরধার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। চার দশক ধরে চলা ‘ঠান্ডা যুদ্ধের’ সমাপ্তি ঘটাতে এক ধারে যেমন সচেষ্ট হন তিনি, তেমনই সদ্দাম হুসেনের আধিপত্য রুখতে সেনা পাঠিয়ে মধ্য প্রাচ্যে নয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন বুশ। তবে, দেশের অভ্যন্তরেই অনেকটাই জনপ্রিয়তা হারিয়েছিলেন বুশ। প্রেসিডেন্ট দৌড়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বিল ক্লিনটনের কাছে ধরাশায়ী হতে হয় তাঁকে। তবে, ২০০১ সালে তাঁর সন্তান জর্জ ডব্লিউ বুশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩-তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।