বাংলাদেশ পুলিশ স্বাধীনতার সূর্যসন্তান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধকারী বীর পুলিশ যোদ্ধাদের সম্মাননা জানাল। আজ মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর রমনায় পুলিশ কনভেশন হলে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধযোদ্ধাদের এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব অপরূপ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে পাক সামরিক জান্তা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ইতিহাসের যে জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল সে পৈশাচিকতার প্রথম টার্গেট ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্। স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের বজ্রদীপ্ত আহ্বানে উদ্দীপ্ত ছিল তৎকালীন পুলিশের বাঙালি সদস্যরা। তারা পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্-এ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তারা থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে যে প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন সমর ইতিহাসে তা এক বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালে বাংলাদেশ পুলিশকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন বীর পুলিশ সদস্যরা। তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা। তিনি পূর্বসূরীদের আত্মত্যাগ এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গঠনে নিরপেক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব অপরূপ চৌধুরী বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সরকার মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১১’ এ ভূষিত করেছে। তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা প্রদানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক।
আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের বিভীষিকাময় রাতে রাজারবাগসহ ঢাকা শহর পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়েছিল। এ সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের বেতারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এরপর প্রায় সকল পুলিশ লাইন্সেই প্রতিরোধের প্রস্তুতি শুরু হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের মত প্রতিরোধ যুদ্ধ হয় রাজশাহী, চট্টগ্রাম, পাবনা, কুষ্টিয়াসহ বড় বড় পুলিশ লাইন্সে। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় ওয়্যারলেস বেইজ থেকে প্রেরিত বার্তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে আপামর জনসাধারণ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, মাস্টাররোল এবং মুজিবনগর সরকারের দলিলপত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার কর্মস্থল ত্যাগ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ১১০০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য। অনেকে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে ৩৪ জন প্রতিরোধযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ইতোপূর্বে আরো ৪৪ জন প্রথম প্রতিরোধযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক জনাব হাসান আরিফ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপিগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, প্রতিরোধযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্য এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।