মেক্সিকোতে একটি মন্দিরের মিনার খুঁজে আবিষ্কার হয়েছে থরে থরে সাজানো মহিলা এবং শিশুদের মোট ৬৭৫টি খুলি। ওই মন্দিরে দেড় বছর ধরে খননের এই অদ্ভুত আবিষ্কার হয়েছে। এর ফলে আজটেক সভ্যতা সম্পর্কে প্রত্নতত্ত্ববিদদের নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। এই খুলির মিনারটি ‘হুয়ে জোম্পান্তলি’ বা হাড়ের সারির অংশ। আজটেক রাজধানী ‘টেনোকটিটলান’-এর অন্যতম প্রধান মন্দির ‘টেম্পলো মেয়র’।
এই মন্দিরের কাছেই খননের পর খুলির মিনার পাওয়া গেছে। কনকিস্তাদোর বা স্পেনীয় শাসকরা এই শহর জয়ের পরে ‘হুয়ে জোম্পান্তলি’ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তাদের লেখাতেও এই খুলির মিনারের উল্লেখ রয়েছে। ১৫২১ সালে মেক্সিকো জয়ের পরে আন্দ্রে দে টাপিয়া নামে এক স্পেনীয় যোদ্ধা এই মিনারটির কথা জানিয়েছিলেন। প্রত্নতত্ত্ববিদ রাউল বারেরা জানিয়েছেন, টাপিয়া লিখেছিলেন এমন হাজার হাজার খুলি রয়েছে ওই এলাকায়।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিশ্বাস, খনন যত এগোবে, মিলবে আরও খুলি। আজটেক এবং মেসোআমেরিকান জনতা সূর্যদেবকে উৎসর্গ করতে মানুষ বলি দিত। প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, আজটেক সভ্যতার বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে যাঁরা প্রাণ হারাতেন, সেই সব পুরুষ যোদ্ধাদের বলি দিয়ে খুলি এই ভাবে জমা রাখা হয়।
ঐতিহাসিকদের মতেও, স্পেনের শাসনের আগে মেসোআমেরিকান সংস্কৃতিতে হেরে যাওয়া যোদ্ধাদের মাথা কেটে জোম্পান্তলি-তে রাখা হতো। কিন্তু মন্দিরের মিনার খুঁড়ে পাওয়া গেছে শিশু ও মহিলাদের খুলি। এর প্রেক্ষিতে নৃতত্ত্ববিজ্ঞানী রডরিগো বোলানোস বলছেন, “আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম ওগুলো শুধু পুরুষদের খুলি। লড়াকু যুবকদের। কিন্তু ওই সময়ে মহিলা বা শিশুদের তো যুদ্ধে যাওয়ার প্রশ্নই নেই।
এটা সত্যি নতুন ব্যাপার। এর কোনও রেকর্ডও নেই আমাদের কাছে।” আগে ধরে নেওয়া হতো, শুধু পুরুষদেরই মাথা কাটা হতো, সে বিশ্বাস থেকে সরে আসার দিন এসেছে। এখন প্রত্নতত্ত্ববিদরা এটাই মনে করছেন। রাউল বলছেন, জোম্পান্তলি-তে সাধারণের দর্শনের জন্য রাখার পরে ওই খুলিগুলো মিনারে নিয়ে যাওয়া হতো। এই মিনারের কাছেই হুইৎজিলোপোচিটলি (আজটেক সভ্যতায় সূর্য, যুদ্ধ এবং বলির দেবতা) চ্যাপেল। এটির নীচে এখনও খনন শুরু হয়নি।