হু হু করে মেঘ নেমে আসছে নীচে? যেন আমাদের ওপরেই ঝাঁপিয়ে পড়বে! ঢেকেঢুকে দেবে আমাদের। জীবন, যাপন। হালকা হয়ে যাচ্ছে মেঘ, তুলোর মতো? পাতলা হয়ে যাচ্ছে মেঘ? চেহারায় ছোট হয়ে যাচ্ছে মেঘ, আড়ে ও বহরে? সেই ধীরে ধীরে নীচে নেমে আসা মেঘ আমাদের জাপটে ধরবে আরও বেশি করে? ফাঁস হয়ে বসবে গলায়?
একেবারে হালের একটি গবেষণার ফলাফল থেকে এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছে নাসা।
গত ১৫ বছর ধরে পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তের আকাশে মেঘের আকার-আকৃতি, আচার-আচরণ দেখে, মেঘেদের মেপে-টেপে মহাকাশে পাঠানো নাসার ‘টেরা’ উপগ্রহ জানিয়েছে, মেঘ বোধহয় ধীরে ধীরে নেমে আসছে। হামলে পড়তে চলেছে আমাদের ওপর! যেন মেঘই তাদের ‘ছায়া’য় ঢেকেঢুকে দেবে আমাদের জীবন, যাপন!
নাসার একটি গবেষণার ফলাফল বলছে, মেঘ একটু একটু করে আমাদের ঘাড়ের ওপরে এসে যাচ্ছে। পাতলা হয়ে যাচ্ছে। ছোট হয়ে যাচ্ছে। চেহারায় খাটো হয়ে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে উজ্জ্বলতাও। তবে সেটাও যে খুব নিয়ম মেনে হচ্ছে, তা নয়। পৃথিবীর সর্বত্রই হচ্ছে, এমনটাও নয়। কখনও হচ্ছে, কখনও তা হচ্ছে না। কোথাও হচ্ছে, আবার কোথাও কোথাও তা হচ্ছে না। কেন হচ্ছে, খুব সঠিক ভাবে যে তা বোঝা যাচ্ছে না, সেটাও কবুল করেছেন নাসার গবেষকরা।
গত ১৫ বছর ধরে পৃথিবীর দিকে মোট ৯টি ক্যামেরাকে তাক করে রেখে আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহটিকে চক্কর মেরে গিয়েছে নাসার ‘টেরা’ উপগ্রহ। আর বিভিন্ন কৌণিক অবস্থান থেকে ওই ৯টি ক্যামেরায় তোলা মেঘেদের ছবি বিশ্লেষণ করেছে উপগ্রহটির ‘মাল্টি-অ্যাঙ্গেল ইমেজিং স্পেকট্রো-রেডিওমিটার (এমআইএসআর) ইনস্ট্রুমেন্ট। ছবিগুলি তোলা হয়েছে দৃশ্যমান আলো ও কাছের অবলোহিত রশ্মির (নিয়ার-ইনফ্রারেড) চারটি তরঙ্গদৈর্ঘ্যে (ওয়েভলেংথ)।
১৯৯৯ সালে মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছিল এমআইএসআর। মেঘেদের ওপর নজর রাখতে। সেই এমআইএসআর-এর পাঠানো প্রথম ১০ বছরের ডেটা নিয়ে ২০১২-য় তাঁর গবেষণাপত্রে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বাকলে-গ্ল্যাভিশ চেয়ার’ প্রফেসর রজার ডেভিস দেখিয়েছিলেন, গত এক দশকে পৃথিবীর কোথাও কোথাও মেঘ নেমে আসছে আমাদের ঘাড়ের ওপর। কোনও কোনও বছরে বা বছরের বিশেষ কোনও সময়ে।
অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক রজার ডেভিস বলেন ‘‘প্রশান্ত মহাসাগরে লা-নিনা আর এল-নিনোর প্রভাবেই মেঘেদের এই নামা-ওঠা হচ্ছে। মেঘেদের উচ্চতার ওপর এদের প্রভাবটাই সবচেয়ে জোরালো। আমরা দেখেছি, ২০০৮ সালে লা-নিনার দরুন বিশ্ব জুড়ে মেঘ নেমে এসেছে গড়ে ১৩০ ফুট বা, ৪০ মিটার। তার মানে, প্রায় ১১ তলা বাড়ির মতো। আবার এল-নিনোই আমাদের ওপর হামলে পড়া মেঘকে ঠেলেঠুলে ওপরে তুলে দিচ্ছে। মেঘেদের এই নামা-ওঠায় বেশ কিছুটা ফারাকও দেখেছি আমরা উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্যে। সেই তারতম্যটা দেখেছি একই গোলার্ধের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যেও। আর দেখেছি, ওই সব কিছুর পিছনেই কলকাঠি নাড়ছে লা-নিনা এবং এল-নিনো।’’
মেঘ আসলে সময়ের নিরিখে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া! অল্প সময়ের ছোট্ট ‘ট্র্যাক’-এ তার মতিগতি বোঝাটা বড়ই দুষ্কর!
মেঘ সত্যি-সত্যিই আমাদের ওপর হামলে পড়ছে কি না, বলা যাবে আরও অন্তত ১৫ বছরের সময়সীমার ‘ট্র্যাক’-এ তাকে দৌড় করানোর পর!