পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি তেল,আমিষ ও ভিটামিন জাতীয় খাদ্য উৎপাদনের প্রতি জোর দিতে হবে। ভোজ্যতেলের ওপর আমদানি নির্ভরতা কমাতে হলে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। সরিষা,তিল,তিসির উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৌমাছির পরাগায়ন উল্লেখ্যযোগ্য ভুমিকা রাখে। এসব ফসলের ক্ষেতে মৌ চাষ করে ফসলের ফলন ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা যায়,একই সঙ্গে বাড়তি হিসাবে মধু উৎপাদিত হয়। মধু মনবদেহের জন্য মহৌষধ। মধু উৎপাদনের মাধ্যমে চাহিদা ও যোগানের পার্থক্য অনেকখানি মেটানো সম্ভব। বর্তমান কৃষি ও কৃষক বান্ধব সরকার তেল ও ডাল জাতীয় ফসল উৎপাদনের প্রতি পূর্বের তুলনায় অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী আজ ঢাকার খামাড় বাড়ি আ.কা.মু গিয়াস উদ্দীন মিল্কী অডিটরিয়াম জাতীয় মৌ মেলা-২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সেমিনারে এসব কথা বলেন।
কৃষি মন্ত্রী বলেন,বাংলাদেশ বৈচিত্রময় ষড় ঋতুর দেশ। প্রত্যেক ঋতুতে কোন না কোন ফুল ফুটে। এসব ফুলের মধু আহরণের অপার সুযোগ রয়েছে। একারণে মৌ চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপন্ন হয়, কিন্তু এর সম্ভাব্যতা রয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন । একটা সময় ছিল মধু আহরণ ছিল শুধু সুন্দরবন কেন্দ্রিক। সময়ের ব্যবধানে এর উৎপাদন ও ব্যবহার বেড়েছে বহুগুন। দেশের সকল শ্রেণীর কৃষক সমাজকে সম্পৃক্ত করে ফসলের ফলন ও মধুর উৎপাদন বৃদ্ধিসহ গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য আরও অধিকহারে মৌ-চাষ সম্প্রসারণ করতে হবে।
মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, দেশব্যাপী সরিষা,কালোজিরা,ধনিয়া,পেয়াজ ও তিল ফসলের জমিতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ২শত ৬৫টি মৌবাক্স স্থাপনের মাধ্যমে ফসলসমূহের ফলন ও মধুর উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সম্প্রসারণ কর্মীবৃন্দ। দেশে মধুর উৎপাদন ও বহুমাত্রিক ব্যবহার বেড়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধু এখন রপ্তানি পণ্য তালিকায় নাম লিখিয়েছে। এখন পেশাদার মৌচাষি ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চাষিরা বিভিন্ন অঞ্চলে ফসলের জমিতে বা বাগানে মৌবাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করেন। আধুনিক পদ্বতিতে বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষ করে শত শত মেট্রিক টন মধু উৎপাদন করা হচ্ছে। আমাদের আরও অগ্রসর হতে হবে । সকল পর্যায়ে স্টেকহোল্ডারকে মৌচাষে উদ্বুদ্ধ করতে এই মেলা অত্যন্ত কার্যকরী ও সময়োপযোগী।
উল্লেখ্য বাক্সে মৌ চাষে বছরে গড়ে একটি বাক্স হতে প্রায় ২০ কেজি মধু উৎপাদিত হয় যার বর্তমান বাজার মূল্য কেজি প্রতি ২৫০ টাকা হতে ৩০০টাকা পর্যন্ত হিসেবে ৬ হাজার টাকা। পরাগায়ন বৃদ্ধির ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় প্রায় ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। দেশে সরিষাসহ তৈল জাতীয় ফসলের প্রায় ৬ লাখ হেক্টর আবাদী জমিতে হেক্টর প্রতি ১টি মৌ-বাক্স স্থাপন করলে প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদনসহ ফসলের নূন্যতম ১০ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি ধরে মোট ৭০ হাজার মেট্রিক টন এর অধিক তৈল জাতীয় ফসল উৎপাদন সম্ভব। এপর্যন্ত সরকার ফসল ও মধুর উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৬ শত জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ ও ২লাখ ৫০ হাজার জন কৃষককে মৌ-পালনের ওপর ওরিয়েন্টেশন প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। এছাড়া চলমান প্রকল্পে আরও ৯ শত জন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ ,৬০ জন কর্মকর্তাকে ৩ মাসের সার্টিফিকেট কোর্স,ইউনিয়ন ভিত্তিক ৪ হাজার ৫ শতটি কৃষক উদ্যোক্তা তৈরী এবং কৃষক উদ্যোক্তাগণের মধ্যে ২ হাজার মৌ বাক্স বিতরণ এর কার্যক্রম রয়েছে।
কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসিন, মহাপরিচালক,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্, সিনিয়র সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়, খোন্দকার আমিনুজ্জামান, প্রকল্প পরিচালক,কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান,পরিচালক,হর্টিকালচার ঊইং এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর সাখাওয়াৎ হোসেন,কীটতত্ব বিভাগ,শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।