ডিএমপি নিউজ: নড়াইল জেলার কালিয়া থানার ফুলদহ গ্রামের ভ্যান চালক মো: ইবাদুল ইসলাম ওরফে ইবাদ(৩৬) মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা ডিএমপি নিউজকে জানান, গত ৯ মে, ২০২০ রাতে মো: ইবাদুল ইসলামের শশুর বাড়ির পাশ থেকে তার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সংক্রান্তে যশোরের কালিয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়। পিবিআই যশোর জেলা ক্রাইসিন টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর বিষয়ে কিছু অসংগতি সনাক্ত হওয়ায় মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা অব্যহত রাখেন।
পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ ও মামলাটির তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম ডিএমপি নিউজকে বলেন, নিহত ইবাদুল ইসলামের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে পারিবারিক কলহের বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়। তদন্তের ধারাবাহিকতায় ভিকটিমের স্ত্রী আমেনা বেগম(৩০) সহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আমেনা বেগম হত্যাকান্ডের সাথে একাই জড়িত মর্মে স্বীকার করলে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, আমেনা বেগম জিজ্ঞাসাবাদে জানায় প্রায় ১৩/১৪ বছর পূর্বে তার সাথে ইবাদুল ইসলামের বিয়ে হয়। তাদের ২টি পুত্র ও ০১টি কন্যা সন্তান আছে। নিহত ইবাদ শেখ মাদক সেবন করতো এবং মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। তার অন্য কোন উপার্জনের মাধ্যম ছিল না। বিবাহের পর হতে তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়শই ঝগড়া বিবাদ হতো। এই বিষয়ে উভয়ের মধ্যে চরম আকারে বিরোধ দেখা দেয়। অনুমান ০১ বছর পূর্বে নিহত ইবাদ শেখ মাদক মামলায় গ্রেফতার হলে তার স্ত্রী আমেনা তিন সন্তানসহ আমতলাস্থ তার বাপের বাড়ীতে চলে যায়। মাঝে মধ্যে নিহত ইবাদ স্ত্রীকে তার বাড়ীতে নিয়ে আসতো এবং কখনও কখনও রাত্রে গিয়ে শ্বশুর বাড়ীতে থাকতো। গত ৯ মে, ২০২০ রাতে ইবাদুল নিজ বাড়ীতে ছিলো। স্ত্রী’র ফোন ফেয়ে ইবাদুল ইসলাম শশুর বাড়ীতে চলে যায়। রাত ১২:০০ টা পর্যন্ত অবস্থান করার পর তার স্ত্রী তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু ইবাদুল ঐদিন তার স্ত্রীর সাথে শশুর বাড়িতে থাকতে চায়।
উল্লেখ্য যে, নিহতের স্ত্রী দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। যা তার স্বীকারোক্তি এবং মোবাইল ফোনের কথোপকথন থেকে সত্যতা পাওয়া যায়। ঘটনার রাত্রে তার স্ত্রীর কাছে ০২ জন খরিদ্দার আসার জন্য যোগাযোগ করছিল। কিন্তু নিহত ইবাদুল শশুর বাড়িতে অবস্থান করার কারণে তারা ০২ জন আসতে পারছিল না। আমেনা বেগম জানায়, নিহত ইবাদ শেখ সেই রাত্রে অনেক মাদক সেবন করেছিল এবং তারা দুই জনই দুধের সাথে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করেছিল। এক পর্যায়ে নিহতের স্ত্রী তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ঘরের বাহিরে গেলে তখন নিহত ইবাদ শেখ মাটিতে বসে পড়ে এবং বলে, ‘‘আমি বাহিরে থাকতে হলেও থাকবো’’। তখন নিহতের স্ত্রী তাকে চলে যাওয়ার জন্য জোর পূর্বক ধাক্কা দিলে নিহত ইবাদুল সুপারি গাছের সাথে মাথায় আঘাত লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাছাড়া অতিরিক্ত মাদক সেবনের কারণে সে শারীরিকভাবেও অনেক দূর্বল ছিল, যা গ্রেফতারকৃতের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়। তাৎক্ষনিকভাবে নিহতের স্ত্রী তার স্বামীর কোমরে থাকা গামছা দিয়ে তার গলা বেঁধে একাই কোনমতে টেনে সুপারি গাছের সাথে বাধা বাঁশের সাথে লাশটি ঝুলিয়ে দেয়। ইতিমধ্যে মসজিদের মাইকে সেহরী খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি শুরু হলে অভিযুক্ত আমেনা বেগম নিজ ঘরে গিয়ে অবস্থান করে। পরবর্তীতে ১০/০৫/২০২০ খ্রিঃ তারিখ সকাল বেলা স্থানীয় লোকজন নিহত ইবাদকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে কালিয়া থানা পুলিশকে অবহিত করেন।
আসামীর স্বীকারোক্তি এবং ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির পর কালিয়া থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়। গ্রেফতারকৃতকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন।