জার্মানির হামবুর্গে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে একরকম বিচ্ছিন্নই বলা চলে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রকে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিকে ছাড়াই নজিরবিহীনভাবে জলবায়ু ইস্যুতে একাট্টা হয়েছে বাকি বিশ্ব।
সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অপরিবর্তনীয়। প্রথমবারের মতো যেন ‘জি১৯’পের উত্থান ঘটেছে। কারণ, সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত অবশিষ্ট ১৯টি দেশই প্যারিস জলবায়ু চুক্তির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে এক প্রতিক্রিয়ায় চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।তিনি ব্যক্তিগতভাবেও ট্রাম্পকে ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী জানান ট্রাম্পের সঙ্গে জি২০ সম্মেলনে তার বেশ কয়েকবারক কথোপকথন হয়েছে। তিনি প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছেন। মের ভাষ্য, ‘আমি আশা অব্যাহত রাখবো যে, যুক্তরাষ্ট্র ফের এই চুক্তিতে ফিরে যাবে।’
সম্মেলনস্থলের পর্দার আড়ালে এই চুক্তি নিয়ে বেশ উত্তপ্ত দরকষাকষি চলছিল বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান। এমনকি বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাতেও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে, তার প্রতিনিধি দল ও ফরাসি প্রতিনিধি দলের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়। এছাড়া উত্তেজনা ছড়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের সংরক্ষণবাদ নীতি ও অতিরিক্ত স্টিল উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েও।সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আমরা মাথায় রাখছি। অবশিষ্ট জি২০ সদস্য রাষ্ট্রের নেতারা বলেছেন, প্যারিস চুক্তি অপরিবর্তনীয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্র একটি জায়গায় সফল হয়েছে। বিবৃতিতে ‘পরিবেশসম্মত উপায়ে’ জীবাশ্ম জ্বালানি আহরণে দেশগুলোকে সহায়তা করার একটি বিতর্কিত বক্তব্য সম্মেলনের বক্তব্যে ঢুকাতে সক্ষম হয়েছে দেশটি। এ নিয়ে পরিবেশবাদী প্রচারকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।অক্সফামের অ্যাডভোকেসি ও ক্যাম্পেইন পরিচালক স্টিভ প্রাইস-থমাস বলেন, ‘প্যারিস চুক্তিতে অপরিবর্তনীয় হিসেবে অন্যান্য ১৯টি সদস্য আখ্যা দিলেও, জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের পক্ষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একগুঁয়ে অবস্থান তাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।
এছাড়া জলবায়ু চুক্তি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নেতিবাচক অবস্থানের কারণে তুরস্ক জানিয়েছে, চুক্তিটি অনুমোদন দিতে তারা এখন কম উৎসাহী। কারণ, চুক্তি মোতাবেক অনেক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা তুরস্কের। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায়, এই ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির সম্ভাবনা কমে গেল।