জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা মুসলিমরা সুরক্ষার জন্য মিয়ানমারের রাখাইনে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের সদস্যদের উপস্থিতি দাবি করেছে। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রুপার্ট কলভাইল এই তথ্য জানিয়েছেন। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এ খবর জানিয়েছে।
মুখপাত্র জানান, রাখাইনের সহিংসতা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপস্থিতি প্রয়োজন। হোক তা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কিংবা কোনও একক রাষ্ট্র বা অন্য কোনও পক্ষ। আর তা সম্ভব হবে কেবল তাদের রাখাইনে ফেরার সুযোগ দিলে। কলভাইল বলেন, মিয়ানমারের সহিংসতায় রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার পদক্ষেপ নিতে হবে। নিরাপত্তার জন্য রাখাইনে শান্তিরক্ষী মিশন চায় রোহিঙ্গারা।
মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র জানান, এই বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভাবতে হবে। এই পরিস্থিতি খুব গুরুতর। পুরো একটি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করে প্রতিবেশী দেশে পাঠানো দেওয়া ঠিক নয়। স্পষ্টতই সেখানে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। অনেক শরণার্থী জানিয়েছেন তারা পূর্ণ নাগরিকত্ব ও নিরাপদে রাখাইনে ফিরতে চান।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞ চালিয়ে তাদের বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য ও ফিরে আসার পথ করার পরও সহিংসতা কবলিত রাখাইনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর বিষয়টি এখনও বিবেচনা করছে না জাতিসংঘ। সহিংসতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে ইউনিসেফসহ জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থার কর্মকাণ্ড রাখাইনে স্থগিত করেছে মিয়ানমার সরকার।
উল্লেখ্য, ২৫ আগস্ট রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরুর পর বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। মাঝখানে কয়েকদিন রোহিঙ্গাদের ঢল কিছু মাত্রায় কমে আসলেও চলতি সপ্তাহে তা আবার বেড়েছে। সোমবার বাংলাদেশে প্রায় এগারো হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। জাতিংঘের মতে, ১৯৭০ সালের পর এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত সবচেয়ে মানুষের বাস্তুচ্যুতির ঘটনা এটি।
জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের প্রামাণ্য উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। মিয়ানমার সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। জাতিসংঘ রাখাইনে সামরিক অভিযানে সেনা সদস্যদের দ্বারা ধর্ষণ, নবজাতক ও শিশুসহ হত্যা, নির্মম ও গুমের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছে। রোহিঙ্গাদের ফিরে আসার পথ বন্ধ করতে বাংলাদেশ সীমান্তে স্থলমাইন পুঁতে রাখা হয়েছে।