ইউরোপের সুন্দর গোছালো দেশ ক্রোয়েশিয়া। আয়তনের টিক থেকে ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রের চেয়ে ধের ছোট একটি রাষ্ট্র। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন নি যে ক্রোয়েশিয়ার মতো একটি দল রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে যাবে…কিন্তু তারা গেছে।
স্বাগতিক রাশিয়াকে ছাড়াও তারা হারিয়েছে আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে। আগামী রবিবার ফাইনালে তারা মুখোমুখি হচ্ছে ফ্রান্সের। ইউরোপের ছোট্ট এই দেশটি সম্পর্কে আপনি যদি খুব বেশি কিছু জেনে না থাকেন, সেকারণে নিচে খুব সংক্ষেপে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো।
জন্ম ১৯৯১ সালে
রোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকেই কোন না কোন ফর্মে এই ক্রোয়েশিয়ার অস্তিত্ব ছিল। তবে বর্তমানে ক্রোয়েশিয়া নামের যে রাষ্ট্র, ১৯৯১ সালের আগে তার কোন অস্তিত্ব ছিল না।
সেবছরের জুন মাসে আধুনিক এই রাষ্ট্রটি ইয়ুগোস্লাভিয়া থেকে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সদস্য ক্রোয়েশিয়া এবং দেশটির লোকসংখ্যা ৪০ লাখের সামান্য বেশি। সারা বিশ্বের সবকটি দেশের জনসংখ্যা হিসেবে করলে ক্রোয়েশিয়ার অবস্থান ওই তালিকার ১৩০ নম্বরে।
রাজনীতি
ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোতে পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী একটি বহুদলীয় ব্যবস্থাতে সরকার প্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ক্রোয়েশীয় সংসদ বা সাবর (Sabor)-এর হাতে ন্যস্ত। বিচার ভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ হতে স্বাধীন। ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান সংবিধান ১৯৯০ সালের ২২শে ডিসেম্বর গৃহীত হয়। দেশটি ১৯৯১ সালের ২৫শে জুন প্রাক্তন ইউগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
এক তৃতীয়াংশ ঢাকা বনে জঙ্গলে
ক্রোয়েশিয়ায় খুবই চমৎকার কিছু জাতীয় পার্ক আছে, আছে অপূর্ব কিছু লেক, যেখানে আপনি সাঁতার কাটতে পারেন। বনে জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু অসাধারণ ঝর্ণা। এমন সব বনাঞ্চল আছে ক্রোয়েশিয়ায়, যাতে কখনো কারও আঁচড় পড়েনি।
বিশ্বব্যাঙ্কের হিসেবে অনুসারে দেশটির তিন ভাগের একভাগ এলাকা জুড়ে আছে অরণ্য। ক্রোয়েশিয়ায় মোট আটটি জাতীয় পার্ক আছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি প্লিৎভিচ লেক। এটি ক্রোয়েশিয়ার বৃহত্তম লেক এবং জাতিসংঘের বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বিশ্বের যেসব এলাকাকে ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে এই লেক তার একটি।
ডালমাশিয়ান কুকুর ক্রোয়েশিয়া থেকে
বিরল ডালমাশিয়ান জাতের কুকুরের জন্ম ক্রোয়েশিয়ায়। বলা হয়, ডালমাশিয়া অঞ্চলে এর উৎপত্তি। সাদা চামড়ার শরীরে কালো কালো স্পটের জন্যে বিখ্যাত এই প্রজাতির কুকুর। ষোড়শ শতাব্দীতে আঁকা পেইন্টিংসে এবং গির্জার ক্রনিকেলেও এই কুকুরটিকে দেখতে পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের আর কোথাও এই কুকুরটির মতো অন্য কোন কুকুর দেখতে পাওয়া যায় না। এবং ডালমাশিয়াতে এর উৎপত্তি বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে ডালমাশিয়ান।
গেম অফ থ্রোন্সের শহর ক্রোয়েশিয়ায়
গেম অফ থ্রোন্স এমন এক কল্পরাজ্য যাতে আছে বহু ড্রাগন এবং হোয়াইট ওয়াকার। কিন্তু এটা একেবারেই স্বপ্নের কোন জগত নয়।
‘ওয়েস্টেরস’ নামের কাল্পনিক ওই দেশের রাজধানী ‘কিংস ল্যান্ডিং’ এর অস্তিত্ব যেন আছে ক্রোয়েশিয়ারই একটি শহরে, আর সেই শহরটির নাম ডুব্রোভনিক। এই শহরেই গেম অফ থ্রোন্স সিনেমার প্রায় পুরোটা অংশ চিত্রায়ন করা হয়েছে।
প্রাচীণকালের ঐতিহ্যবাহী গথিক ও রেনেসাঁ গির্জার জন্যে বিখ্যাত এই শহর। আছে অপূর্ব নৈসর্গিক সব দৃশ্য।গেম অফ থ্রোন্সের জনপ্রিয়তার কারণে এই শহরে পর্যটকেরও সংখ্যাও অনেকে বেড়ে গেছে।
ক্রাভাত টাই–এর জন্মও ক্রোয়েশিয়ায়
একটি বিশেষ ধরনের টাই – ক্রাভাত। পরা হয় গলার চারপাশে। এটি অনেকটা আধুনিক কালের ‘নেকটাই’ কিম্বা ‘বো টাই’ এর মতো। বহু ভাষাতেই হয়তো এই টাই-এর আদি শব্দ হিসেবে ক্রোয়াতা শব্দটিকে পাওয়া যাবে।
সপ্তদশ শতাব্দীতে যে ‘থার্টি ইয়ার্স ওয়ার হয়েছিল’ সেসময় ফরাসী সেনাবাহিনীতে ক্রোয়েশিয়ানরা তাদের গলায় এই কাপড়টি পেঁচিয়ে রাখতো।সেখান থেকেই এই ক্রাভাত টাই এর জন্ম। দেশটিতে প্রতিবছর ১৮ই অক্টোবর পালন করা হয় আন্তর্জাতিক ক্রাভাত দিবস হিসেবে।
নিজেদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি তুলে ধরতে ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকরা বিশেষ এই দিনটিতে গলায় নেকটাই পরে থাকেন।