দিনে প্রাপ্তবয়স্কদের ২ লিটার করে পানি খাওয়া উচিত একথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু একটি শিশুর দিনে কতটা পানি খাবে?শিশুরা একেবারেই পানি খেতে চায় না। আর তা নিয়েই মা বাবা থাকেন চিন্তায়। কারণ একবার পানি না খাওয়ার অভ্যাস হলে তা ফিরানো কঠিন। তবে অতিরিক্ত পানি খাওয়াও কিন্তু বিপদজনক। তাই সন্তানকে পানি দিতে হবে পরিমান মেনে। এ নিয়ে যা বলছেন চিকিৎসকরা।
একটি শিশুর শরীরের ৭৫% ফ্লুইড থাকে। শিশু যত বড় হতে থাকে, জলীয় পদার্থের পরিমান কমে ৬০% হয়। শরীরের জন্য পানি তাই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে অতিরিক্ত পানিও বিপদ ডেকে আনতে পারে।
একটি শিশুর শরীরে দিনে কতটা পানির প্রয়োজন তা তার বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। তার সঙ্গে যে পরিবেশে সে বড় হচ্ছে, তাও শরীরে ফ্লুইডের চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
আমাদের দেশে ৪-৮ বছরের শিশুরা দিনে ১.১ লিটার থেকে ১.৩ লিটার পর্যন্ত পানি খাবে। ৯-১৩ বছর বয়সী মেয়েদের দিনে ১.৩ থেকে ১.৫ লিটার পর্যন্ত পানি প্রয়োজন। ৯-১৩ বছর বয়সী ছেলেদের প্রয়োজন দিনে ১.৫ থেকে ১.৭ লিটার পর্যন্ত পানি। সরাসরি পানি ছাড়াও দুধ, ফলের জুস থেকেও ফ্লুইড প্রবেশ করে আপনার সন্তানের শরীরে।
কিন্তু কীভাবে বুঝবেন শিশুর শরীরে পানি শূন্যতা হচ্ছে এবং পানি দরকার। শিশুদের শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে খিটখিটে মেজাজ, মনঃসংযোগের অভাব, রুক্ষ ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বাচ্চারা একবারে বেশি পানি খেতে পারে না। তাই একটু একটু করে বারে বারে পানি খাওয়ানো দরকার। কোথাও যাওয়ার আগে, খাওয়া শুরু করার আগে পানি খাওয়ান। বাইরে কোথাও গেলে সঙ্গে পানির বোতল রাখুন।
অতিরিক্ত পানি পানে রয়েছে বিপদ!
অতিরিক্ত পানি পান ডেকে আনতে পারে ভয়ানক বিপদ। সাধারণত মানুষের কিডনি অতিরিক্ত পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দিতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত পানি পানের ফলে কিডনিকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। এতে কিডনির ওপর চাপ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে মারাত্মক রকম। আর কিডনি কাজ না করতে পারলে অতিরিক্ত পানি শরীরে জমে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই বুঝে শুনে পানি পান করতে হবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী একজন মানুষের স্বাভাবিকভাবে ২-৩ লিটার পানি পানই যথেষ্ট। তবে ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটির এক প্রতিবেদন দাবি করে স্বাভাবিকভাবে এরচেয়ে কম পানি পান করলেও অসুবিধা নেই। পুরুষদের জন্য ২ লিটার আর নারীদের জন্য ১ দশমিক ৬ লিটার পানিই স্বাভাবিক। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, দিনের অসংখ্য খাবারের মধ্য দিয়ে পানি প্রবেশ করছে আমাদের দেহে তাই ২ বা দেড় লিটার পানি পানই স্বাভাবিক।
তবে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ গ্রহণকারীদের জন্য বেশি পানি পানের পরামর্শ চিকিৎসকরাই দিয়ে থাকেন। যাতে শরীর থেকে রাসায়নিক উপাদান দ্রুত প্রস্রাবের মাধ্যমে নিস্কাশিত হয়। জ্বর, ডায়রিয়া জাতীয় অসুখেও বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
কিডনির সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদেরাগ ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা আছে, এমন রোগীদের পানি পানের পরিমাণটি চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নেওয়াই শ্রেয়। অহেতুক অতিরিক্ত পানি পান তাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তবে বর্তমান সময়ে চিকিৎসকদের প্রধান পরামর্শ হচ্ছে, যে পরিমাণ পানিই একজন পান করুক না কেন তাকে অবশ্যই ফুটানো অর্থাৎ জীবাণুমুক্ত পানি ও পরিশোধিত দূষণমুক্ত পানি পান করতে হবে।