ডিএমপি নিউজ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যাংক কর্মকর্তা, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালকসহ একাধিক পরিচয়ে ব্যাংকে নিয়োগ, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোসহ বিভিন্ন চাকুরী দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ এনায়েত খান, মোঃ কাওসার আলী, কাজী হাবীব, সেলিম আহামদ, ফয়েজ উল্লাহ, জালাল উদ্দিন তালুকদার, মোঃ সাগর ও মোঃ সুলতান মাহমুদ।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর ২০২২) রাজধানীর মতিঝিল, মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এসময় তাদের হেফাজত হতে বিভিন্ন চাকুরীর ভুয়া নিয়োগপত্র, ৮টি মোবাইল ফোন ও ১টি কম্পিউটার উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম পিপিএম-সেবা ডিএমপি নিউজকে জানান, ভুক্তভোগী মোঃ শওকত আলী গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রিঃ তারিখ বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় এনায়েত খান, মোঃ কাওসার আলী ও কাজী হাবিবসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, এনায়েত খানের সাথে একই ভবনে বসবাস করার প্রেক্ষিতে শওকত আলীর পরিচয় হয়। এনায়েত খান, শওকত আলীর ছেলে এবং তার ভায়রার ছেলেকে সাউথইস্ট ব্যাংকে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে সেখানে গিয়ে ভাইভা পরীক্ষা দিতে বলে। এনায়েত খানের কথামতো গত ১৭ আগস্ট ২০২০ খ্রিঃ তারিখ সকাল ১১.০০ ঘটিকায় শওকত আলীর ছেলে ও তার ভায়রার ছেলে মতিঝিলে সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে গেলে কাজী হাবিব নিজেকে সাউথইস্ট ব্যাংকের পিয়ন পরিচয় দিয়ে তার ছেলে ও তার ভায়রার ছেলেকে ব্যাংকের ভিতরে নিয়ে যায়ে এবং মোঃ কাওসার আলীকে সাউথইস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়। মোঃ কাওসার আলী ব্যাংকের অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তার সাথে ভুক্তভোগীর ছেলে ও ভুক্তভোগীর ভায়রার ছেলেকে পরিচয় করিয়ে একসাথে বসে প্রায় ঘন্টাখানেক ভাইভা নিয়ে তাদের বিদায় করে দেয়। ভাইভা পরীক্ষা দেওয়ার কিছুদিন পর এনায়েত খান, শওকত আলীকে জানান যে, তার ছেলে ও তার ভায়রার ছেলের নামে সাউথইস্ট ব্যাংকের ০২ (দুই) টি যোগদান পত্র পেতে গেলে ব্যাংকে ডোনেশন বাবদ ১০,০০০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা দিতে হবে। পরবর্তীতে শওকত আলী রাজি হলে তার বর্তমান বাসায় অবস্থানকালে গত ০১সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকায় চাকুরীতে যোগদানপত্র পাওয়ার জন্য বিশ্বাস করে নগদ ৯,০০,০০০/- (নয় লক্ষ টাকা) এনায়েত খানের নিকট প্রদান করে। কিন্তু এনায়েত খান যোগদানপত্র না দিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকলে শওকত আলী তার টাকা ফের চায়। কিন্তু এনায়েত খান টাকা দেই দিচ্ছি বলে শওকত আলীকে ঘুরাতে থাকে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মিরপুর মডেল থানার মামলা নং-১৯, তারিখ- ৭/৯/২০২২ খ্রিঃ, ধারা-৪২০/৪০৬ পেনাল কোড রুজু হয়। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে এবং আসামীদের গ্রেফতার করে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত মোঃ এনায়েত খান, কাজী হাবীব, জালাল উদ্দিন তালুকদার, মোঃ সাগর, মোঃ সুলতান মাহমুদ গণ বিভিন্ন এলাকা হতে চাকুরী প্রত্যাশী সংগ্রহ করে অপর আসামী মোঃ কাওসার আলীর নিকট নিয়ে যায়। আসামী মোঃ কাওসার আলী অপর আসামী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিম আহামদের সাথে যোগযোগ করে মতিঝিল এলাকায় সাউথ ইস্ট ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে রিসিপশনে বসিয়ে সংগৃহীত চাকুরী প্রত্যাশীদের নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার অভিনয় করে ভাইভা নিয়ে দ্রুত ব্যাংক হতে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে মোঃ এনায়েত খাঁন, কাজী হাবীব, জালাল উদ্দিন তালুকদার, মোঃ সাগর, মোঃ সুলতান মাহমুদগণ মিলে উক্ত চাকুরী প্রত্যাশী ও তাদের অভিভাবকদের নিকট থেকে চাকুরী হবে মর্মে প্রতারণাপূর্বক টাকা আত্মসাৎ করে।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিম আহামদ কম্পিউটার অপারেটর ফয়েজ উল্লাহর মাধ্যমে ভুয়া চাকুরীর নিয়োগপত্র তৈরী করে। প্রতারণার মাস্টারমাইন্ড সেলিম আহামদের পূর্বে ০৬ টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ০৩টি মামলাতে সে সাজাপ্রাপ্ত ও ০৩টিতে ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী, বলে তিনি যোগ করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, উত্তরা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিম আহামদ স্বীকার করেন তারা পরস্পর যোগসাজসে সাউথইস্ট ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার নিয়োগের কথা বলে কৌশলে ব্যাংকের রিসিপশনে বসে অত্র মামলার ভিকটিমসহ অন্যান্য চাকুরী প্রত্যাশীদের বিভিন্ন দিন ও তারিখে ভাইভা পরীক্ষা নিয়েছে। এছাড়াও, আসামীদের ব্যবহৃত WhatsApp চ্যাটিং হিস্ট্রিতে প্রাইমারী সহকারী শিক্ষক নিয়োগ, ব্যাংকে চাকুরী, বদলি, পদোন্নতি, বিভিন্ন নিয়োগসহ একাধিক প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, পিপিএম এর দিক নির্দেশনায়, অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার, পিপিএম এর তত্ত্বাবধানে, সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
গ্রেফতারকৃতদের মিরপুর মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলায় বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান গোয়েন্দা একর্মকর্তা।