ডিএমপি নিউজঃ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ একদিনে হয়ে ওঠেনি। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা এ সহিংস উগ্রবাদের পথে এসেছে বিধায় একদিনেই বা দ্রুত সময়ে এটা দমন করা সম্ভব না। সহিংস উগ্রবাদ রুখে দিতে পারলে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ হবে না বলে জানান ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সিটিটিসি’র প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম(বার)।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল ১১টায় লালমাটিয়া মহিলা কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত জঙ্গিবাদ বিরোধী শপথ বাক্য পাঠ ও সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দলসমূহের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে উক্ত অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জঙ্গিবাদ বিরোধী শপথ বাক্য পাঠ করান ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় আটশত শিক্ষক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা গবেষণা করে দেখেছি ১৫-৩০ বছর বয়সের তরুণ-তরুণী উগ্রবাদের সাথে যুক্ত হচ্ছে। উগ্রবাদ শুধুমাত্র ধর্মের কারণে হয় না। ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে সহিংস উগ্রবাদ রুখে দেয়ার জন্য মননশীল মানুষ তৈরি করতে হবে। স্কুল কলেজে পর্যাপ্ত খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। যুক্তি মনস্ক মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীরা যাতে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য বিতর্ক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আরো বেশি বেশি করে করতে হবে। যার মধ্যে যুক্তিবাদী মন আছে, সহমর্মিতা ও সহিষ্ণুতা আছে এবং অপরকে ভালোবাসতে জানে সেইতো মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়া পুরোপুরি নিরপেক্ষ। এটা ভালো ও খারাপ দুই কাজেই ব্যবহার করা যায়। এটা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উপর। অন্য ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। মনে রাখতে হবে ইসলাম কখনো হত্যা বা সহিংসতাকে সমর্থন করে না। আমাদেরকে প্রিয় নবীর মত সহনশীল ও পরমত সহিষ্ণু হতে হবে। ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে সমাজে এন্টিবডি তৈরি করতে হবে। এন্টিবডি বলতে ধর্মীয় সঠিক জ্ঞান সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া, প্রথমত পরিবার থেকে শিক্ষা নেয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক শুধু পাঠদান করেন না, তিনি মানুষ গড়া কারিগর। উগ্রবাদ সম্পর্কিত সংবাদ প্রচারে মিডিয়াকে দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে, সিভিল সোসাইটি ও কমিউনিটির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা দিয়ে সকলের মাঝে এন্টিবডি তৈরিতে মসজিদের ঈমামের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা মাধ্যমে সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী এন্টিবডি তৈরি করতে পারি। সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী প্রধান এন্টিবডি হতে পারে ডিবেট বা বিতর্ক। যুক্তিতর্ক দিয়ে যেকোন বিষয়ের খারাপ ও ভালো দিকের বিচার করা সম্ভব।
তরুণদের উদ্দেশ্যে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে যে এন্টিবডি তৈরি হলো তা শুধু তোমরা নিজেরাই অনুসরণ করবে তা নয়, অন্যদেরও পথ দেখাতে হবে। আমি বিশ্বাস করি তরুণরাই আমাদের পথ দেখাবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র থাকলেও তা মোকাবেলায় আমাদের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। এখানেই সব ধর্মের-বর্ণের মানুষের এক অপূর্ব মিল-বন্ধন রয়েছে। বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ছাড়া মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান প্রত্যেকেই যার যার ধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছে। তবে যখন আমরা দেখি নিউজিল্যান্ডে মসজিদে নামাজরত অবস্থায় মুসলমানদের উপর হামলা করে মানুষ হত্যার করা হয় এবং এর কিছুদিন পর শ্রীলংকায় গীর্জায় প্রার্থনারত অবস্থায় খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের উপর হামলা করে মানুষ মারা হয় তখনই আমরা শংকিত হই। এ কারনে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি দুঃখ করে বলেন, কোথাও কোন উগ্রবাদী মুসলমান কাউকে হামলা করলে ফলাও করে ইসলামিক টেরোরিস্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু যখন মুসলমানদের উপর কেহ হামলা করে তখন কোন বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে বলতে শুনিনা কোন শ্বেতাঙ্গ টেরোরিস্ট সেখানে হামলা করেছে।
এখানে উল্লেখ্য দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, রানারআপ হয় তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা, যাত্রাবাড়ি ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে সরকারি বাঙলা কলেজ মিরপুর। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দলসমূহকে ট্রফি ও সনদ প্রদান সহ ফুলের মালা পরিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের আহবায়ক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান মুকুল ও লালমাটিয়া মহিলা কলেজ ডিবেটিং ক্লাবের মডারেটর ড. ফেরদৌস আরা খানম।