২০১৫ সালে সিরিয়ার ভয়াবহ যুদ্ধে পালিয়ে বাবা-মা’ র সঙ্গে দিলয়ার সাফো আশ্রয় নেন তুরস্কে । বর্তমানে তুরস্কে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছে । সেখানেই করছে পড়াশোনা। সিরিয়ার এই শরণার্থী কিশোর যাযাবর জীবনেই উচ্চ-মাধ্যমিকের (এসএসসি) চূড়ান্ত বোর্ড পরীক্ষায় দেখিয়েছে চমক। সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সবাইকে ছাপিয়ে গেছে।
তুরস্কভিত্তিক আনাদোলু এজেন্সি এটা নিয়ে বিশেষ খবর প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, গত ৬ জুন তুরস্কে প্রবেশিকা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তুরস্কের জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছর ৩৬টি প্রদেশের ৯৭ জন শিক্ষার্থী শতভাগ নম্বর পেয়েছে। এর মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে আগত দিলয়ার সাফো অন্যতম। তিনি কুরতালান সালাউদ্দিন আয়ুবী ইমাম হাতিপ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন।
দিলয়ার সাফো জানান, ২০১৫ সালে যখন তিনি তুরস্কের দক্ষিণপূর্ব সিরত প্রদেশে এসে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। ওই সময় তিনি তুর্কি ভাষা জানতেন না। এখন তিনি আরবি, কুর্দিস, তুর্কি ও ইংরেজি ভাষা জানেন।
সফলতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি প্রায় দুই বছর ধরে পরীক্ষায় কীভাবে ভালো করা যায় তা নিয়ে কঠোর মনোনিবেশ করছিলাম। মহামারিতে যখন পড়ালেখা বন্ধ হবার উপক্রম তখন শিক্ষকরা অনুপ্রাণিত করেছে।
সাফল্যের কৃতিত্ব শিক্ষকদের উল্লেখ করে দিলয়ার সাফো বলেন, করোনা মহামারির সময় শিক্ষকরা আমাকে হোয়াটস অ্যাপে নিয়মিত অনুশীলন প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে সহায়তা করেছে। পরীক্ষায় সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়ার জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করতাম। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস থাকলে সফলতা অবশ্যম্ভাবী। ভবিষ্যতে আমি একজন প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) হতে চাই।
দিলয়ার সাফোর স্কুলের শিক্ষক পোলাত বলেন, আর্থিক কারণে তার পরিবার জেলা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা যেতে দেইনি। স্কুলের শিক্ষক-কর্মকর্তা-অভিভাবকরা মিলে গত তিন বছর ধরে তার পরিবারকে সমর্থন দিয়েছি। তার বাবা-মা উভয়ই পেশায় দর্জি। তার ছোট দুই ভাই-বোন আছে।
জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১১ সালের যুদ্ধের পর থেকে কয়েক লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে। আর ১ কোটি মানুষ শরণার্থী হয়েছে। এর মধ্য ৪০ লাখ শরণার্থী আছে তুরস্কে। ২০১৯-২০২০ সালের শিক্ষাবর্ষে ৬ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষার্থী সিরিয়ার স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি।