রাজধানীর বসুন্ধরা গেটের সামনে বিইউপি’র ছাত্র আবরার হত্যা মামলায় সেই সু-প্রভাত পরিবহন বাসের মালিক ননী গোপাল সরকারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি উত্তরের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম।
আত্মগোপনে থাকা বাসের মালিক ননী গোপাল সরকার (৪২)কে ৪ এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ০৬.৩০ টায় মুগদা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এই নিয়ে বাসের চালক সিরাজুল ইসলাম, কন্ডাক্টর মোঃ ইয়াছিন আরাফাত ও হেলপার মোঃ ইব্রাহীম হোসেনসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
উল্লেখ্য যে, গত ১৯ মার্চ ২০১৯ মঙ্গলবার ঢাকা সু-প্রভাত পরিবহনের ঢাকা মেট্রো -ব-১১-৪১৩৫ বাসটি বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভারর্সিটি অব প্রফেশনালের শিক্ষার্থী আবরার আহম্মেদকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই তিনি মৃত্যবরণ করেন। উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে গুলশান থানায় মামলা রুজু হয়।
উক্ত বাসের ড্রাইভার সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ১৯/০৩/২০১৯ তারিখ ভোর ০৫.৪৫ টায় সদরঘাটের ভিক্টোরিয়া পার্ক হতে ছেড়ে আসা সু-প্রভাত পরিবহনের বাসটির ড্রাইভার সিরাজুল ইসলাম গুলশান থানার শাহজাদপুর বাঁশতলা অতিক্রম করার সময় মিরপুর আইডিয়াল গালর্স ল্যাবলেটরী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সিনথিয়া সুলতানা মুক্তাকে চাঁপা দিয়ে গুরুতর জখম করে। উক্ত ঘটনায় সু-প্রভাত পরিবহনের যাত্রীরা ড্রাইভার সিরাজুলকে আকট করে ট্রাফিক পুলিশে হস্তান্তর করে।
পরবর্তী সময়ে উপস্থিত জনতা বাসের ক্ষতি সাধন করতে পারে বিধায় বাসের কন্ডাক্টর মোঃ ইয়াছিন আরাফাত তার মোবাইলে ফোন হতে বাসের মালিক ননী গোপাল সরকারকে ফোন দিলে কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাতের ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই জানা সত্ত্বেও তাকে বাসটি চালিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশে দেন।
মালিকের নির্দেশই দ্রুত ঘটনাস্থল হতে বাস চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় নর্দ্দায় বিইউপি’র ছাত্র আবরারকে বাস চাপা দিয়ে হত্যা করে। প্রাথমিকভাবে বাস চালক সিরাজুল বাস চালিয়ে দূর্ঘটনা সংঘটনের কথা স্বীকার করায় পুলিশের ধারনা ছিল সে-ই আবরারকে হত্যা করেছে। সেই কারনে পুলিশ তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পরবর্তী সময়ে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জড়িত কন্ডাক্টর ১। মোঃ ইয়াছিন আরাফাত (২২), হেলপার ২। মোঃ ইব্রাহীম হোসেন (২১) দের গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। তারা বিজ্ঞ আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে এবং বাসের মালিক ননী গোপাল সরকারের নির্দেশে বাস চালিয়েছিল মর্মে জবানবন্দি প্রদান করে।
এরপর বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করে আত্মগোপনে থাকা বাসের মালিক ননী গোপাল সরকার (৪২)কে গত ০৪/০৪/২০১৯ তারিখ সন্ধ্যা ০৬.৩০ ঘটিকায় ঢাকা মুগদা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে বাস মালিক ননী গোপাল সরকার জানান তার বাসটি ঢাকা (মহাখালী)-বিবাড়ীয়া রুটের পারমিট থাকা সত্ত্বেও সু-প্রভাত বাস কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সাথে যোগ সাজসে সু-প্রভাত ব্যানারে সদরঘাট (ভিক্টোরিয়া পার্ক) হতে গাজীপুরা রুটে পরিচালনা করতেন।
একটি দূর্ঘটনা ঘটনার পর বাস মালিক বা কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো দূর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা কিন্তু বাস মালিক ননী গোপাল সরকার সে দায়িত্ব পালন না করে একজন অদক্ষ ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন বাসের কন্ডাক্টরকে দ্রুত বাস চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়া ননী গোপাল সরকার গত দুই থেকে আড়াই বছর আগে বাসটি ক্রয় করলেও অদ্যবধি পর্যন্ত বাসের মালিকানা পরিবর্তন করেন নাই।
আজ ৫ এপ্রিল, ২০১৯ ননী গোপালকে ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ডের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।