জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, আইসিডিডিআরবি ও যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ‘ব্রেভ স্টাডি’ (বাংলাদেশ রিস্ক অব অ্যাকিউট ভ্যাসক্যুলার ইভেন্টস) নামক জরিপে জানা গেছে, ২০২০ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ১০০ শতাংশ। কিন্তু সেই মাত্রা ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশে!
বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে হৃদরোগের প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বেশকিছু কারণ দেখছেন। এর মধ্যে আছে— অবসাদগ্রস্ত জীবন, দারিদ্র্য, সঠিক খাদ্যাভাস না থাকা, ডায়াবেটিস, পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা, তেল, চর্বি কিংবা অধিক ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার, ধূমপান, অ্যালকোহল ও তামাক-জর্দা সেবন, গর্ভকালীন সময়সহ অপুষ্টিজনিত সমস্যা, জটিলতা, কায়িক পরিশ্রম না করা, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে কাজ করা ইত্যাদি।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যেয়ে দেখা যায়, রোগীদের ভিড়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। নির্ধারিত আসন সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন সরকারি এই হাসপাতালে।
পুরনো হৃদরোগীদের সংখ্যাও দেশে নেহাৎ কম নয়। এমন অনেকে আছেন যারা বহুদিন ধরে হৃদরোগে ভুগেছেন। তাদেরই একজন ২২ বছরের তরুণ রুবেল হোসেন । গত বছর তিনি প্রথমবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন । বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছিলেন তিনি। তিনি আবারও চলতি বছর মার্চের শেষের দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হন ।চিকিৎসকরা জানান, নানান মানসিক চাপের ধকল নিতে না পেরেই তিনি হৃদরোগ আক্রান্ত হন, সঙ্গে আছে ধূমপানের অভ্যাস।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগ মৃত্যুর কারণ হলো অসংক্রামক ব্যাধি; করোনারি হৃদরোগ এর মধ্যে অন্যতম। এটি শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ মৃত্যুর কারণ।
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভ্যাসক্যুলার সার্জন ডা. সাকলায়েন রাসেল বলেছেন, ‘প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রোটিন-সি ও প্রোটিন-এস রক্তের অভাব হলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।’
টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে বলে জানান ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘পরিবার থেকেও অনেকে হৃদরোগের জিন বহন করেন। বাবার হার্টের অসুখ থাকলে সন্তানের মধ্যেও সেই লক্ষণ দেখা যায়।’
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছুদিন আগ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও বর্তমান সময়ে শিশু হৃদরোগীর সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। দেশে বর্তমানে প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে ১০ থেকে ১২টি শিশু জন্মগ্রহণ করছে হৃদরোগ নিয়ে। সে হিসাবে গড়ে প্রতি বছর ২ লাখের বেশি শিশু জন্মগতভাবেই হৃদরোগে ভুগছে। আবার তাদের মধ্যে অনেক শিশু যথাযথ চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মারা যাচ্ছে জন্মের ৬ থেকে ৭ মাস বয়সে।
বাংলাদেশে শতকরা ১০ শতাংশ শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় বলে জানা যায় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে। এখানে ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৯৭ হাজার ৯৮৭ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। সেই সঙ্গে প্রতি বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে ৭ হাজার ৫৩৮ জন শিশু।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) তথ্যানুযায়ী, এই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগে গত সাত বছরে প্রায় চার হাজার শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা করিয়েছে। ভর্তি হয়েছে নয়শ’র বেশি শিশু রোগী। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২টি শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা নিচ্ছে।