বাংলাদেশি দুই চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ও ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসায় ‘ন্যাসভ্যাক’ নামে নতুন ওষুধের সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন করেছেন । কিউবাতে শুরু হয়েছে তাদের উদ্ভাবিত নতুন এই ওষুধ। যদিও আইনি জটিলতার কারণে বাংলাদেশেই এখনও এই ওষুধের ব্যবহার সম্ভব হয়নি।
জাপানের এহিমে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২০ বছর হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছেন ডা. আকবর। জাপানের সরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণার জন্যও সারাবিশ্বে স্বীকৃত। এছাড়া, একই সময়ে বাংলাদেশে ‘হেপাটাইটিস বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় এক হাজার রোগী নিয়ে কাজ করেছেন ডা. মাহতাব। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ‘ন্যাসভ্যাক’ সুফল বয়ে আনতে পারে বলে বাংলাদেশসহ উঠে আসে এসব গবেষণায়। ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, ‘এই ওষুধ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়। এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগের এই সহযোগী বলেন, ‘হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসায় ‘ন্যাসভ্যাক’ কিউবা ও জাপানে প্রাথমিক গবেষণায় অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল প্রমাণিত হয়। এরপর আমরা দেশে ‘ক্রনিক হেপাটাইসিস বি’ রোগীদের চিকিৎসায় এই ওষুধটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করার সিদ্ধান্ত নেই এবং সাফল্যও পাই। কিন্তু আমাদের দেশে আইনি জটিলতার কারণে এটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।’ দেশে এই ওষুধের ব্যবহার চালু করা গেলে হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে আসত বলে জানান তিনি।
ন্যাসভ্যাকের এই সাফল্যের খবর এশীয়-প্রশান্ত-মহাসাগরীয় লিভার অ্যাসোসিয়েশনের জার্নাল ‘হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল’-এ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালের নভেম্বর সংখ্যায়। এরপর ২০১১ সালে ১৫১ জন ক্রনিক রোগীর ওপর ন্যাসভ্যাকের তৃতীয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়। এই ট্রায়ালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও এফডিএ এবং বাংলাদেশের ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমতি নেওয়া হয়। পাশাপাশি বিএসএমএমইউ ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের ‘ইথিক্যাল অ্যাপ্রুভাল’-ও নেওয়া হয়।
ন্যাসভ্যাকের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালটি চালানো হয় ২০১৩ সালে। এই ট্রায়ালটি লিভার বিশেষজ্ঞদের সর্বোচ্চ বৈজ্ঞানিক কনফারেন্স হিসেবে স্বীকৃত আমেরিকান লিভার মিটিংয়ে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিস্টিংশন পদক’ লাভ করে। এরপরই এটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত শুরু হয় কিউবাতে। দেশটিতে ‘হেবার-ন্যাসভ্যাক’ নামে বিক্রি হচ্ছে ওষুধটি। রাশিয়াতে চলছে মাল্টিসেন্টার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। জাপানেও ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিলেছে। শিগগিরই সেখানে চালানো হয় এর ট্রায়াল।