জেলার গংগাচড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেংমারি আশ্রয়ন প্রকল্প পুনর্বাসিত ১৫০ টি ভূমিহীন পরিবারকে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে
বারবার নদী ভাঙ্গনের ফলে সবকিছু হারিয়ে এই পরিবারগুলো বর্ণনাতীত দু:খ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে ভাসমান জীবন যাপন করে আসছিলো। ‘চেংমারি আশ্রয়ণ ধাপ-২ প্রকল্প’ ও ‘চেংমারি আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে পুনর্বাসিত হওয়ায় বদলে যায় তাদের জীবনের গল্প।গংগাচড়া উপজেলার সমবায় কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, “‘চেংমারি আশ্রয়ণ ধাপ-২ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে ২০১০ সালে ৫০ টি পরিবার এবং ২০১২ সালে ‘চেংমারি আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে আরো ১০০ টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়”।
পরবর্তীতে, স্থানীয় সরকার বিভাগ তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, সহযোগিতা দেয়। পাশাপাশি আয়বর্ধক কাজ করার জন্য উপজেলা সমবায় অফিস তাদের মধ্যে বিনা সুদে ঋণ দেয়।
‘চেংমারি আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের’ মাধ্যমে ২০১২ সালে পুনর্বাসিত হন নূর মোহাম্মদ (৪২) ও লায়লা খাতুন (৩৫) দম্পতি । নূর মোহাম্মদ (৪২) বলেন, “কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া গ্রামে আমার পৈতৃক বাড়ি বাড়ি ছিলো। ২৭ বছর আগে ব্রহ্ম্রপুত্রের ভাঙ্গনে আমাদের সব সম্পত্তি গ্রাস করে নিলে আমি ভূমিহীন হই। কাজের সন্ধানে গংগাচড়া এসে অন্যের জায়গায় বসবাস শুরু করি। পরে স্থানীয় লায়লা খাতুনকে বিয়ে করে এখানেই স্থায়ীভাবে থেকে যাই।
তিনি বলেন, ২০১২ সালে আমার পরিবার, আমার স্ত্রীর বিধবা বোন শেফালী বেগমের (৫০) পরিবার ও শেফালী বেগমের মেয়ে বাতাসী বেগমের (৩০) পরিবার একসাথে ‘চেংমারি আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের’ মাধ্যমে পুনর্বাসিত হই।নূর মোহাম্মদ বলেন, “উপজেলা সমবায় অফিস থেকে ট্রেনিং নেয়ার পর আয়বর্ধক কাজের জন্য প্রথমে আমি ৫,০০০ টাকা ও শেফালী বেগম এবং তার মেয়ে বাতাসী বেগম ১০,০০০ টাকা বিনা সুদে ঋণ পাই”। এদিকে বাতাসী বেগমের স্বামী আব্দুল লতিফ (৩৫) একটি হোটেলে দৈনিক ৩৫০ টাকা রোজে ও নূর মোহাম্মদের ছেলে (২৪) ৫৫০ টাকা রোজে রাজমিস্ত্রির কাজ করে পরিবারে টাকার যোগান দিতে থাকেন।
লায়লা খাতুন বলেন, “আমরা সব টাকা একত্র করে দুটি ছাগল, একটি ষাঁড় ও একটি মুদি দোকান দেই। দুই বছর পর দুটি ছাগল ১০,০০০ টাকা ও ষাঁড়টি ৪৫,০০০ টাকায় বিক্রি করি”। নূর মোহাম্মদ নিয়মিত উপার্জন করতে একটি অটো রিক্সা চালানো শুরু করেন।
শেফালী বেগম ও বাতাসী বেগম প্রথম ঋণ পরিশোধ করায় তারা দ্বিতীবার প্রত্যেকে ১৪,০০০ টাকা করে ঋণ পান। দ্বিতীয় ঋণ পরিশোধ করায় তারা প্রত্যেকে গত বছর আবার ১৬,০০০ টাকা করে ঋণ পান। বাতাসী বেগম জানান, এই কয় বছরে তারা ৫৫ শতক আবাদযোগ্য জমি তিন লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন এবং সেখানে তিনটি শষ্য উৎপাদন করে বছরে এক লাখ টাকা আয় করেন। এদিকে লায়লা খাতুনকে দিয়ে তারা একটি মুদি দোকানও চালান।
বাতাসী বেগম বলেন, “আমরা ৭৫,০০০ টাকায় তিনটি ষাঁড় কিনেছি। এগুলো আগামী কোরবানীর ঈদে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করার আশা আছে।নূর মোহাম্মদ বলেন, “সুখে, স্বাচ্ছন্দে পরিবার নিয়ে জীবন যাপন করতে বর্তমানে আমাদের নিজেদের প্রায় সাত লাখ টাকার সম্পত্তি আছে। আমদের সন্তানরা এখন স্কুলেও যাচ্ছে”।২০১০ সালে ‘চেংমারি আশ্রয়ণ ধাপ-২ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে পুনর্বাসিত দম্পত্তি নূর সাহেব (৩৮) ও তাঁর স্ত্রী লাকী বেগম। আয়বর্ধক কাজের প্রশিক্ষণ নেয়ার পর, ২০১২ সালে উপজেলা সমবায় অফিস প্রথমে ৬,০০০ টাকা ঋণ নিয়ে বর্গাচাষী হিসেবে শষ্য উৎপাদন শুরু করেন।
প্রথম ঋণ পরিশোধের পর, ২০১৪ সালে তাঁরা ৮,০০০ টাকা ঋণ পান। এই টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় কেনেন। যা ২০১৬ সালে ২৪,০০০ টাকায় বিক্রি করে দ্বিতীয় ঋণ পরিশোধ করেন এবং গত বছর আবারো ১৮,০০০ টাকা ঋণ নেন।বর্তমানে তাঁদের তিন লাখ টাকার নিজস্ব সম্পত্তি আছে বলে জানান তার স্ত্রী লাকী বেগম। এবারে তারা দুটি ষাঁড় কিনেছেন। চাষাবাদের জন্য ১২ শতক আবাদযোগ্য জমি ২৪,০০০ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। পাশাপাশি লাকী বেগম নিজে একটি মুদি দোকানও চালান। তাদের বড় মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে, ছেলে তৃতীয় শ্রেণীতে ও ছোট মেয়ে প্রথম শ্রেণীতে পড়ছে।
সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এই দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে কার্যকরীভাবেই ১৫০ টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করেছে এবং তাদের আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। যা তাদের ভাগ্যে বদলে দিয়েছে।