মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের মাইলফলক বছর। আর কয়েক মাস পর জুন মাসেই আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি বহুল আকাক্সিক্ষত পদ্মাসেতু। অনেক ষড়যন্ত্রের জাল আর প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে যাচ্ছি’।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ও রেডিও স্টেশনগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিজয়ী হওয়ার পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনা চতুর্থ বারের মতো (টানা তিনবার) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের স্তর থেকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে যেসব বড় অবকাঠামো প্রকল্প সরকার নিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু (সড়ক) আসছে জুনে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর অক্টোবরে উদ্বোধন করা হবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। ডিসেম্বরে রাজধানীবাসীর জন্য চালু হবে প্রথম মেট্রোরেলের আংশিক সেবা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ষড়যন্ত্রের জাল আর প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে যাচ্ছি। এই সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে সরাসরি রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করবে।’ খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে বাংলাদেশ।
এরপর ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় পূর্ণ আকৃতি পায় স্বপ্নের সেতু, যুক্ত হয় পদ্মার দুই পাড়। ইতোমধ্যে সেতুর ৯৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে প্রকল্পের কর্মকর্তাদের ভাষ্য। পদ্মা নদীর ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু দেশের জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এ বছরের শেষ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এ অংশে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।’
উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটারের এমআরটি-৬ লাইনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ প্রকল্পের সমন্বিত অগ্রগতি হয়েছে ৭২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ বছরের ডিসেম্বরে ওই অংশে যাত্রী পরিবহন শুরু করা যাবে বলে আশা করছে সরকার। আর মতিঝিল পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ট্রেন চলাচল শুরু হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করা যায়, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।’
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণকাজের তিন-চতুর্থাংশ শেষ হয়ে গেছে। আগামী অক্টোবরেই দেশের প্রথম এই টানেল চালু করা যাবে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে আশা প্রকাশ করেন।
কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেল হলে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যের আর প্রসার ঘটবে, জীবনমানেও পরিবর্তন আসবে বলে সরকার আশা করছে।
দেশের অন্য বড় প্রকল্পগুলোর কাজও এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভাষণে বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট আগামী বছরের এপ্রিল নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের সরকার হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। গত ১৩ বছরে আমরা আপনাদের জন্য কী কী করেছি, তা আপনারাই মূল্যায়ন করবেন। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি আমরা যেসব ওয়াদা দিয়েছিলাম, আমরা তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।’তথ্যসূত্র:বাসস