ডিএমপি নিউজঃ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সেই নারকীয় গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে আজ। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। আর যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে। মামলার আরও ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার মোট ৫২ আসামির মধ্যে তিন জনের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
বুধবার (১০ অক্টোবর, ২০১৮) পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
গ্রেনেড নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং এই অপরাধে সহায়তা করে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন—আলহাজ্ব মাওলানা মো. তাজউদ্দিন (পলাতক), মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জি. এম, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, মো. উজ্জল ওরফে রতন, মো. লুৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল (অব:) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম, মো. আব্দুস সালাম পিন্টু ও মো. হানিফ (হানিফ পরিবহনের মালিক)।
যাবজ্জীবন প্রাপ্তরা হলেন-শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ আবু ওমর আবু হোমাইরা ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মোহাম্মদ খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মো: ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চোধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।
এছাড়াও, মো. আশরাফুল হুদা (আইজিপি অবঃ), শহুদুল হক (আইজিপি অবঃ), লেঃ কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেঃ কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (পিআরএল) এ,টি,এম আমিন, ডিআইজি খান সাঈদ হাসান (সাবেক ডিসি দক্ষিণ, ডিএমপি, ঢাকা), পুলিশ সুপার মোঃ ওবায়দুর রহমান খান (সাবেক ডিসি পূর্ব, ডিএমপি, ঢাকা), খোদা বক্স চৌধুরী (আইজিপি অবঃ), এসপি (অবঃ) মো. রুহুল আমিন, এএসপি (অবঃ) আব্দুর রশিদ ও এএসপি (অবঃ) মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মামলার মোট আসামী ছিল ৫২ জন। তার মধ্যে ইতিপূর্বে মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সি, জামাত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও শরিফ শাহেদুল আলম বিপুল এর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের ওই সময়ের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভয়াবহ ওই হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও শ্রবণশক্তি হারান। আহত হন আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী।
এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি এজাহার দায়ের করেন।
রায়কে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় পুরো রাজধানীজুড়ে। আদালত প্রাঙ্গণসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।