রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বহিঃবিশ্বে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরতে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান দেশে বিদেশে পৌঁছে দিতে হবে। রাষ্ট্রপতি আজ নেত্রকোনার মুক্তারপাড়া মাঠে প্রথম আন্তর্জাতিক লোকসংস্কৃতি উৎসব-২০১৮ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। তিনি আন্তর্জাতিক লোকসংস্কৃতি উৎসব ২০১৮-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ সংস্কৃতি ফোরাম বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট লোকগীতি গবেষকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক যতীন সরকার।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, আকাশ সংস্কৃতির ডামাডোলে গা ভাসিয়ে দিলে চলবে না। বরং তা থেকে ভাল দিকগুলো গ্রহণ করে মন্দ দিকগুলো বর্জন করতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলার সংস্কৃতি দেশে-বিদেশে পৌঁছে দিতে কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, নির্মাতা, গবেষকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, এ অঞ্চল থেকেই ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র মতো বিশ্বসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে। ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ প্রকাশিত হওয়ার পর তা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যাপক সাড়া জাগায়। বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনালেখ্য হয়ে উঠে বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
বাংলার বিদগ্ধ জনসহ ইউরোপ, আমেরিকা ও প্রাচ্যদেশীয় অনেক জ্ঞানী-পন্ডি ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র বিভিন্ন পালা মহুয়া, মলুয়া, দেওয়ানা মদিনা ও বীরাঙ্গনা সখিনার সাহিত্যিক সুষমায় মুগ্ধ হয়েছেন। ফরাসী সাহিত্যিক ডক্টর সিলভ্যাঁ লেভি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘মহুয়া পড়িয়া মনে হইলো এই শীতের দেশে থাকিয়াও যেন আমি ভারতবর্ষের বসন্ত ঋতু উপভোগ করিতেছি। শুধু পূর্ববঙ্গই নয়, দেশের রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলেও এখনো অনেক পালাগান অবিচল ধারায় গীত হয়ে আসছে। লোকসাহিত্য সংগ্রাহক ড. মনসুরউদ্দীন ও কবি জসীমউদ্দীন এসব পালাগানের সংকলন প্রকাশ করেছেন। লোকগানের চলমান ধারা বহতা নদীর মতো, আজো বাংলার পথে প্রান্তরে ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি, মুর্শিদী, বাউলগীতি ও পালাগান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।-বাসস