ক্যালিফোর্নিয়ার সুপারমার্কেটের পর এ বার পিটসবার্গের সিনাগগ। ফের বন্দুকবাজের এলোপাথাড়ি গুলিতে প্রাণ গেল ১১ জনের। জখম ৬। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আততায়ীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে গুরুতর জখম তিন পুলিশ অফিসারও।
ঘটনাটা ঘটে শনিবার স্থানীয় সময় সকালে। পিটসবার্গের ঐতিহ্যবাহী ওই মন্দিরে সে সময় একটি অনুষ্ঠান চলছিল। ভিড় জমিয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। অনুষ্ঠানের মাঝেই আচমকা কান ফাটানো আওয়াজ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভিড় লক্ষ্য করেই এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে এক শ্বেতাঙ্গ বন্দুকবাজ। তার মুখে স্লোগান ছিল, “ইহুদিদের মরতে হবে।”
আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায় গোটা এলাকায়। সেই সঙ্গে মানুষের আর্তনাদ। অনেকেই গুলি থেকে বাঁচতে ধর্মস্থানে ঢুকে বেসমেন্টে লুকিয়ে পড়েন।
পিটসবার্গ পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জ্যাসন ল্যান্ডো জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রথমে চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও, বর্তমানে সেটা বেড়ে হয়েছে এগারো।জখমদের চিকিৎসা চলছে স্থানীয় হাসপাতালে। আততায়ীকে ধরার আগে পুলিশের সঙ্গে তার একচোট গুলির লড়াই হয়। তাতে তিন অফিসারের জখম হওয়ার খবর মিলেছে।
পিটসবার্গ থেকে আট কিলোমিটার পূর্বে রয়েছে এই মন্দির, যাকে ‘দ্য ট্রি অব লাইফ সিনাগগ’ বলা হয়। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, বড়সড় নাশকতা তৈরির জন্যই এই মন্দির ও ঘন বসতিপূর্ণ এলাকাকে বেছে নিয়েছে আততায়ী। এই ঘটনার সঙ্গে কোনও জঙ্গি যোগ রয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে টুইট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, “পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গের এই ঘটনায় আমি মর্মাহত। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। বড় নাশকতার চেষ্টা হয়েছে এখানে। ওই এলাকার নিরাপত্তা অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
কয়েক দিন আগেই ক্যালিফোর্নিয়ার একটি মেট্রো স্টেশনের কাছে বন্দুকবাজের হানায় প্রাণ হারিয়েছিলেন দু’জন। রিপোর্ট বলছে, মার্কিন মুলুকে আততায়ীর হানা রুটিনে পরিণত হয়েছে। কখনও স্টেশন, কখনও সুপারমার্কেট এলাকা আবার কখনও রেস্তোরাঁকে বেছে নেওয়া হচ্ছে নাশকতার জন্য। সিনাগগের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাইকেল এইসেনবার্গ বলেছেন, “ধর্মীয় অনুষ্টানের দিনই সবচেয়ে বেশি পুলিশ মোতায়েন থাকে এলাকায়। তা সত্ত্বেও এই ঘটনা প্রশাসনের উদ্বেগকে অনেক বাড়িয় দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ থাবা গেড়ে বসছে মার্কিন মুলুকে। প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে প্রশাসনকে। ”
যুক্তরাষ্ট্রের আগ্নেয়াস্ত্র আইনের সঙ্গে এ হামলার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘সেখানে অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।’
যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন দি অ্যান্টিডিফামেশন লিগ ও জিউইশ কাউন্সিল ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স এ হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ইহুদিদের ওপর সবচেয়ে বড় হামলা বলে উল্লেখ করেছে।
২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল কানসাস অঙ্গরাজ্যের দুটি জায়গায় ইহুদিদের লক্ষ্য করে চালানো বন্দুকধারীর হামলায় তিনজন নিহত হন।