ডিএমপি নিউজঃ রোদ-বৃষ্টি, ঝড়, ধুলো-ধোঁয়া ও শব্দ মাথায় নিয়েই রাস্তায় প্রতিনিয়ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। রমজান মাসেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রোজা রেখে প্রচন্ড খরতাপ মাথায় নিয়ে রাজধানীর প্রতিটি রাস্তার মোড়ে এভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। রাস্তায় ডিউটি, রাস্তায় ইফতার, এমনটিই বললেন একজন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ।
চলছে পবিত্র মাহে রমজান মাস। সামনেই পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। কর্মব্যস্ততা বেড়েছে ঢাকা মহানগরীর। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রাস্তার ট্রাফিক জ্যাম। সন্ধ্যা নামার আগেই ঘরমুখো মানুষের বাসায় ফেরার পালা। রাস্তায় নামে মানুষের ঢল। ট্রাফিক জ্যাম সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। এরপরও ঘরমুখো মানুষ যেন ইফতারের আগেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে এজন্য নিরবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে তারা। সাধারণ মানুষ তাদের প্রিয়জনদের সাথে ইফতার করতে পারলেও, প্রিয়জনদের সাথে ইফতার করা হয়না তাদের। ইফতারের সময়ও তাদের ডিউটি চালিয়ে যেতে হয়। আর দায়িত্বের ফাঁকে কোনভাবে রাস্তায়ই সেরে নিতে হয় তাদের ইফতার।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে ইফতারি করেন তারা, বসারও জায়গা থাকেনা অনেক সময়, কখনো কখনো বসার জায়গা থাকলেও বসার সময়টা পাননা তারা। ইফতারির ফাঁকেই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হয়ে তাদের। দেখা যায়, এক হাতে ইফতারি খান, আর এক হাতে দেন সংকেত।
চলছে প্রচন্ড তাপদাহ। এই গরমে যেখানে ঘরেই থাকা দায়, সেখানে সারাদিন রোজা রেখে তাপদাহ মাথায় নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। যে কষ্টটা অনুমান করা সত্যিই কষ্টকর। রমজানে নগরীর প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে এমন চিত্রই দেখা যায়।
রাজধানীর একটি ট্রাফিক পয়েন্টে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য জানান- ইফতার দাঁড়াইয়া করবো না বইসা করবো তা নির্ভর করে গাড়ির উপর। তিনি বলেন রাস্তায় ইফতারি করতে কষ্ট লাগে পরিবারের সবার সাথে ইফতার করতে পারলে ভালো লাগত কিন্তু আগেতো দায়িত্ব পরে সব কিছু। দেশ সেবায় যেদিন চাকরিতে প্রবেশ করেছি, সেদিন থেকে ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতিকে বাদ দিয়েছে। জাতীয় সকল উৎসবে সবাই যখন তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ করে আমরা তখন সবকিছু ভুলে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। ট্রাফিক পুলিশের তিনি আরো বলেন- ট্রাফিক পুলিশের ইফতারিতে তেমন কোন সুস্বাদু খাবার থাকে না। খাবারের তালিকায় থাকে সামান্য ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি ও পানি।
এ নিয়ে কথা হচ্ছিল একজন পথচারির সাথে তিনি বলেন, সন্ধ্যা নামার আগেই রাস্তায় ঘরমুখো মানুষের ছুঁটাছুঁটি শুরু হয়ে যায়। শুধু রাস্তায় ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। এটা সত্যিই অন্য রকম একটা জীবন।
রোজা রেখে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আবার অনেকে রাস্তায় মাথা ঘুরে পড়ে যান। কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করছেন রাস্তায়ই। তেমনই একজন ট্রাফিক কনস্টেবল আজিজুল ইসলাম। রোজা রেখে গত সোমবার (২০ মে ) দুপুরের ডিউটিতে আসেন তিনি। প্রচন্ড রোধে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
শুধুই কি ইফতার? ঈদের জামাতেও নামাজ পড়তে পারেনা অনেক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। কোন একটি ঈদ জামাতের পাশেই রাস্তার মোড়ে দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের। ইউনিফর্মের আড়ালে ট্রাফিক পুলিশও একজন মানুষ। অথচ সেই মানুষটির গায়ে ঈদের দিনেও থাকেনা নতুন জামা, তার গায়ে জড়ানো থাকে সেই দায়িত্বরত ইউনিফর্ম। যারা দেশের সেবায় এমনিভাবে নিজেদেরকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতি কোন সমবেদনা নয়, মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত করুক তাদের অন্তর।