ডিএমপি নিউজঃ রাজধানীর চকবাজার থানার একটি অপহরণ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ৫৮ লিটার মদসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের চকবাজার থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মোঃ খোকন ওরফে রাজু (২২), মোঃ রোকন ঢালী (৩১), মোঃ ছাদেক (২০) ও মোঃ জুয়েল তালুকদার (৪০)।
এ ঘটনা সম্পর্কে চকবাজার জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ ইলিয়াছ হোসেন ডিএমপি নিউজকে বলেন, চকবাজার থানা এলাকার মোঃ আব্দুর রহমান (২৪) নামের এক যুবক ২৫ মে ২০২০ বাসা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টায় বের হয়ে আর ফিরে না আসায় তার মা ২ জুন ২০২০ তারিখে থানায় জিডি করেন। পরবর্তী সময়ে ১৩ জুলাই অজ্ঞাত নম্বর থেকে ভিকটিমের মায়ের মোবাইলে কল করে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার বিনিময়ে ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় টাকা না দিলে ছেলের লাশও পাবেন না। শুধু তার পরনের কাপড় বাসার সামনে পাবেন। টাকার জন্য এভাবে কয়েকদিন ফোন করতে থাকে। ভিকটিমের মা ছেলেকে দেখতে চাইলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দিয়ে ফোন কেটে দেয়। এই ঘটনায় ২৫ জুলাই ২০২০ ভিকটিম আব্দুর রহমানের মা চকবাজার থানায় অভিযোগ করেন।
এসি চকবাজার বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ২৬ জুলাই বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানা এলাকা হতে মোঃ খোকন ওরফে রাজুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে জানা যায়, ২৫ মে ২০২০ তারিখ আব্দুর রহমান বাসা থেকে বের হয়ে বন্ধুদের নিয়ে মদ পান করেন। বিষাক্ত মদ খেয়ে ঐ দিনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরের দিন সকালে আব্দুর রহমানের শরীরের অবস্থা খারাপ হলে তার সহোচর বন্ধুরা তাকে নিয়ে যাত্রাবাড়ীর অনাবিল হাসপাতালে ভর্তি করেন। আব্দুর রহমানের অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকলে অনাবিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বললে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। সহোচর বন্ধুরা আব্দুর রহমানের মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেলে রেখে সবাই ফোন বন্ধ করে গাঁ ঢাকা দেয়। পরবর্তীতে শাহবাগ থানা আঞ্জুমান মফিদুলে লাশ হস্তান্তর করে।
ডিএমপির এই কর্মকর্তা ডিএমপি নিউজকে আরো বলেন, আনুমানিক এক মাস পরে সহোচর বন্ধুদের একজন খোকন মৃত ভিকটিম এর মা শাহনাজ হক এর নিকট চাঁদা দাবি করে সন্তানকে ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে। বিষয়টি ভিকটিমের মা চকবাজার থানায় জানালে মোঃ খোকন ওরফে রাজু (২২) কে বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ থানা এলাকা হইতে গ্রেফতার করা হয়। মৃত আব্দুর রহমানের মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চকবাজার থানায় মামলা রুজু হয়।
এ বিষয়ে ওসি চকবাজার মওদুদ হাওলাদার ডিএমপি নিউজে বলেন, পরবর্তীতে মামলার তদন্তে গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে কি কারণে মদ খেয়ে ভিকটিমের মৃত্যু হলো সে বিষয়ে মাঠে নামেন এসি চকবাজারের নেতৃত্বে থানার একটি চৌকস টিম। বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর কাহিনী। কোথা থেকে মদ ক্রয় করে ভিকটিমকে খাওয়ানো হয়েছিল কেনই বা তার মৃত্যু হলো ইত্যাদি বিষয়ে তদন্ত শুরু করে ঐ চৌকস টিমের সদস্যরা। তদন্তে বেরিয়ে আসে ভিকটিমের আরও ০২ (দুই) সহোচর যথাক্রমে ১। রোকন ঢালী (৩১), ২। মোঃ ছাদেক (২০) দ্বয়ের নাম। গ্রেফতার করা হয় তাদেরকেও। তদন্তের অভিযান আরও বেগবান হয়। ধৃত আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে এবং তাদের দেওয়া তথ্য মতে বেরিয়ে আসে বংশাল থানাধীন পাকিস্থান মাঠ সংলগ্ন ১৩২/২ মাজেদ সরদার লেনস্থ অবৈধ মদের কারখানা। জব্দ করা হয় বিভিন্ন ব্যান্ডের কাচের ৫৯ (উনষাট) টি খালি মদের বোতল, বিভিন্ন প্রকার ব্যান্ডের বোতলে সর্বমোট ৫৭.৮ লিটার মদ ও ০১ (এক) টি ৩২ ইঞ্চি ফ্লাট টিভি। এইসব মালামাল সঙ্গে মোঃ জুয়েল তালুকদার (৪০) নামে ০১ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ঘটনায় চকবাজার থানায় মামলা রুজু হয়েছে। সোমবার (২৭ জুলাই) গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।