উপকূলে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিতে আবহাওয়া অধিদফতর ঝড়ের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন সতর্কতা সংকেত জারি করে থাকে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কায় সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য বিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
গতকাল দুপুরে আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর, কক্সবাজারকে ৬ নম্বর এবং পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর ‘বিপদ সংকেত’ দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঝড়ের গতি ও বিপদের সম্ভাব্য মাত্রা বিবেচনায় ১ থেকে ১১ নম্বর পর্যন্ত সংখ্যা দিয়ে উপস্থাপিত সঙ্কেতগুলো ব্যাখ্যা করে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি বাংলাদেশের তৈরি পর্যায়ক্রমিক এই সঙ্কেত ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক সঙ্কেত ব্যবস্থা থেকে কিছুুটা ভিন্ন। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের মাত্রা একই। ঝড় কোন দিক দিয়ে যাবে তার ভিত্তিতে নম্বর আলাদা করা হয়। বিপদ সঙ্কেতের মানে হচ্ছে, বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়েছে। ঝড়ে সময় বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার থাকবে।
এদিকে বাতাসের গতিবেগের ভিত্তিতে সাগরে বায়ুচাপ ও ঝড়ের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারে বেশি হলে ঘূর্ণিঝড় ধরা শুরু হয়। সমুদ্রবন্দরের জন্য সঙ্কেতগুলো ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত : বঙ্গোপসাগরে দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে। সেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার, যা পরিণত হতে পারে সামুদ্রিক ঝড়ে।
২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সঙ্কেত : দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮২ কিলোমিটার। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ বিপদে পড়তে পারে।
৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত : বন্দর ও বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজগুলো দুর্যোগকবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার।
৪ নম্বর হুশিয়ারি সঙ্কেত : বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার, তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনও আসেনি।
৫ ও ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত : ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত : ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরের ওপর বা নিকট দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।
৮ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত : বন্দর সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত : বন্দর সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত : বন্দর সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরের ওপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।
১১ নম্বর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সঙ্কেত : আবহাওয়া বিপদ সঙ্কেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ। ঝড়ের শ্রেণিবিভাগ : লঘুচাপ : ঘণ্টায় গতিবেগ ১৭ থেকে ৩০ কিলোমিটার সুস্পষ্ট লঘুচাপ : ৩১ থেকে ৪০ কিলোমিটার নিম্নচাপ : ৪১ থেকে ৫০ কিলোমিটার গভীর নিম্নচাপ : ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার ঘূর্ণিঝড় : ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার তীব্র ঘূর্ণিঝড় : ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হ্যারিকেনের গতিসম্পন্ন : ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার সুপার সাইক্লোন : ২২০ বা তার বেশি।