ডিএমপি নিউজ: উগ্রবাদী নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র নায়েবে আমিরকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সিটি ইনভেস্টিগেশন টিম।
গ্রেফতারকৃতের নাম মোঃ মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখ।
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার হেফাজত থেকে ২টি মোবাইল এবং ১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
আজ বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) দুপুর ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম-বার।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সিটিটিসি কর্তৃক গ্রেফতারকৃত শুরা সদস্য ডাঃ শাকের ওরফে শিশির, পলাতক জঙ্গি নেতা শামিন মাহফুজসহ গ্রেফতারকৃত মোঃ মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখ বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যাংছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দিস শারক্বীয়া’র প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যায়। এসময় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কুকি-চিনদের বিদ্রোহী সংগঠন কেএনএফ (কুকি-চিন ন্যশানাল ফ্রন্ট)-এর তত্ত্বাবধানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ চলতো। সেখানে তাদের সাথে কেএনএফ-এর প্রধান নাথান বম ও অন্যান্য কুকি-চিন নেতাদের সাথে সাক্ষাত হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে “জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” নামে সংগঠনটির নামকরণ করা হয় এবং শুরা কমিটি গঠন করে। গ্রেফতারকৃত মোঃ মহিববুল্লাহকে সংগঠনটির নায়েবে আমির হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। গ্রেফতারকৃত মোঃ মহিববুল্লাহ ক্যাম্পে অবস্থানকালে সন্ধ্যার পর প্রশিক্ষণরত সদস্যদের উদ্দেশে বয়ান দিত। তার বয়ানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জঙ্গি সদস্যদেরকে জিহাদের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত মোঃ মহিববুল্লাহ পাহাড়ে কিছুদিন অবস্থান করার পর ঢাকায় চলে আসে। এরপর সে শুরা কমিটির সদস্যদের সাথে এনক্রিপ্টেড চ্যাট-এর মাধ্যমে সমন্বয় করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াতের মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রম বৃদ্ধির কার্যক্রম চালাতে থাকে। শুরা সদস্য ডাঃ শাকের ওরফে শিশিরকে দাওয়াতী কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য গ্রেফতারকৃত মোঃ মহিববুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংগঠনের শুরা পর্যায়ের একাধিক সদস্যের সাথে ঢাকা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মাদারিপুর ও বৃহত্তর বরিশালে সংগঠনের কার্যক্রম জোরদার করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সে একাধিক বৈঠকে অংশ নেয়। এছাড়া সে হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদ্রাসাতে বিভিন্ন সময়ে আসা-যাওয়া করত এবং সেখান থেকে পেইনড্রাইভে বিভিন্ন জিহাদী ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে তার ল্যাপটপে সংরক্ষণ করত। জিহাদ সংক্রান্ত বিষয়ে তার নিজস্ব খসড়া কপিও তার কাছে পাওয়া গেছে। ডাঃ শাকের ওরফে শিশির সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে মোঃ মহিববুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখ নিজেকে আড়াল করতে তার ব্যবহৃত সিম ও মোবাইল ফোন নষ্ট করে ফেলে। পরবর্তীতে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে মোঃ মহিববুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত মহিববুল্লাহ উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নায়েবে আমির হিসেবে কথিত শুরা বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তিনি ভোলার শায়েখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পসহ জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সার্বিক দায়িত্বে ছিল শামীন মাহফুজ। গ্রেফতারকৃত মোঃ মহিববুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখ আল জামেয়াতুল আহেলিয়া দারুল উলুম মইনূল ইসলাম মাদ্রাসা, হাটহাজারি, চট্টগ্রামের ছাত্র থাকাকালে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি-বি)-এর সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়। তৎকালীন হুজির অন্যান্য সদস্যদের সাথে সে বিভিন্ন মাদ্রাসায় কথিত জিহাদী ট্রেনিং গ্রহণ করে। তৎকালীন হুজির নেতা মুফতি আব্দুর রউফ আফগানিস্তানসহ অন্যান্য জায়গায় জিহাদে যাওয়ার ব্যপারে হাটহাজারি মাদ্রাসা ও আশপাশের এলাকায় নিয়মিত বক্তব্য প্রদান করত এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্য করার জন্য সশস্ত্র জিহাদের ডাক দিত। সে সময় হুজির অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের সাথে গ্রেফতারকৃত মোঃ মহিববুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখ যুক্ত ছিল। হাটহাজারি মাদ্রাসা থেকে বের হবে গ্রেফতারকৃত মোঃ মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখ ভোলায় বিভিন্ন মাদ্রাসাতে শিক্ষকতা শুরু করে। প্রশাসনের নজরদারির কারণে হুজি-বি’র কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ায় মোঃ মহিববুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখসহ তৎকালীন হুজির সদস্যগণ নতুন একটি প্লাটফর্মে জিহাদী কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করে। সেই লক্ষ্যে সে হুজির আরেক নেতা মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি তার সাথে ২০১৭ সালে ভোলাতে গিয়ে সাক্ষাত করে। এ সময় হুজির অন্যান্য নেতারাও তাদের সাথে যুক্ত হয়। এরপর থেকেই মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি ও মোঃ মহিববুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হতে থাকে। ২০২১ সালে মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি গ্রেফতার হওয়ার পর হুজির আরেকজন সদস্য রাকিবের সাথে মোঃ মহিববুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখের যোগাযোগ তৈরি হয়। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার কাজে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতী কার্যক্রম চালাতে থাকে।
গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।