ডিএমপি নিউজ: রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় (মূল মিলনায়তন) বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটারের দেশব্যাপী সাড়া জাগানো নাটক ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ এর ১৫০তম সফল মঞ্চায়ন হয়েছে।
সোমবার (১০ জুন ২০২৪) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী উক্ত প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম-বার, পিপিএম-বার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটারের আয়োজনে অভিশপ্ত আগস্ট নাটকের ১৫০তম আয়োজন মঞ্চায়ন হলো, সেটা দেখার সুযোগ পেয়েছি তাই এই ক্লাবের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটা আমার জন্য বড় সুযোগ ছিলো। এই নাটকটি দেখে আমি অনেকটা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছি। এই নাটকের শেষ দৃশ্য যখন দেখছিলাম, তখন আমার মনে হয়েছিলো আমি এই দৃশ্য দেখতে চাই না। এমন ভয়াবহ, মর্মান্তিক ও অভিশপ্ত একটি দৃশ্য।
তিনি বলেন, যার নেতৃত্বে এ বাঙালি তার জাতি রাষ্ট্র গঠন করতে পেরেছে সেই বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। আজ বঙ্গবন্ধুর শুধু আমাদের কাছে শোকের প্রতীক নয় একই সাথে বঙ্গবন্ধু বাঙালির সৃজনশীলতার ও মননশীলতারও প্রতীক। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ কিংবা নাটক লেখা হয়েছে পৃথিবীতে আর কোন নেতাকে নিয়ে এমনটা দেখা যায়নি। এই বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন আমরা এই বঙ্গবন্ধুকে আমাদের হৃদয়ে সৃজনশীলতার, মননশীলতার ও সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে সম্মান করব।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালির ইতিহাসের একমাত্র প্রতীক। বঙ্গবন্ধু যেভাবে একটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে আমি আর কোন উদাহরণ খুঁজে পাই না।
তিনি বলেন, আপনারা যারা এই নাটকটি দেখেছেন আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যারা রয়েছে যারা বঙ্গবন্ধুকে প্রত্যক্ষ করেনি, অপ্রত্যক্ষ বঙ্গবন্ধুকে আজকে যেভাবে এই নাটকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে সেই জীবন্ত বঙ্গবন্ধু আমাদের ইতিহাসে যেমন আছে একইভাবে যেন আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে তিনি বেঁচে থাকেন। সেজন্য বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস সবাইকে ভালোভাবে জানাতে হবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটককে আমি নাটক বলবো না। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া জাতির পিতা এবং তার পরিবারের যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, যেটি বিশ্বের সমস্ত নৃশংসতাকেও হার মানিয়ে ছিলো। ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে সেই ঘটনাটি বাংলাদেশের মানুষকে জানানোর জন্য আমাদের এই প্রয়াস ছিলো।
পুলিশ থিয়েটারের প্রযোজনায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কাল রাতের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের উপর ইতিহাস-আশ্রয়ী ও গবেষণালব্ধ সাড়া জাগানো নাটক ‘অভিশপ্ত আগস্ট’।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার অ্যান্ড কালচারাল ক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)-এর পরিকল্পনা, গবেষণা ও তথ্য সংকলনে নাটকটিতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
নাটকটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক মোঃ জাহিদুর রহমান। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটারের সদস্যরা অভিনয় করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩১ জুলাই উদ্বোধনী প্রদর্শনী হওয়া নাটকটি ইতোমধ্যে দেশের ৪৪টি জেলায় ৮৩ বার এবং ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন মঞ্চে ৬৬ বার সর্বমোট ১৪৯ বার প্রদর্শিত হয়েছে। বিটিভি নিজ স্টুডিওতে “অভিশপ্ত আগস্ট” নাটকটি ধারণ করে বিভিন্ন সময়ে সম্প্রচার করেছে এবং চ্যানেল আই নাটকটি মঞ্চ থেকে সরাসরি এবং বিভিন্ন সময় সম্প্রচার করেছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্ব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম বর্বরতায় স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট কাক ডাকা ভোরে। সেই হত্যাকান্ডের করুণ আলেখ্য এবং পূর্বাপর ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে “অভিশপ্ত আগস্ট” নাটকটিতে। বিশেষ করে ইতিহাসের খলনায়ক খন্দকার মোশতাক এবং ঘাতকচক্রের সদস্য মেজর ফারুক, মেজর রশীদসহ পর্দার আড়ালে থাকা মাস্টার প্লানারদের ষড়যন্ত্রের বীজ বুনন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও ক্ষমতা দখলের নীলনকশা তৈরি এবং সেই ষড়যন্ত্রে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির গোপন পৃষ্ঠপোষকতা এখানে উঠে এসেছে। সেই সাথে উঠে এসেছে আর দশটা সাধারণ দিনের মতই হত্যাকান্ডের পূর্ব পর্যন্ত ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের কর্মব্যস্ততার চিত্র যেটা দেখে বোঝারই উপায় ছিলনা কিছুক্ষণ পরেই বাঙ্গালী জাতির প্রেরণার উৎস এই বাড়ি হয়ে উঠবে বিভৎস এক মৃত্যুপুরী।