বর্ষার ফুল শোভা পাচ্ছে পোশাকের ক্যানভাসে। শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টপ, কুর্তা কিংবা গাউনের মতো পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকে সোনালু, জারুল, কৃষ্ণচূড়া আর অপরাজিতা ফুটছে থোকায় থোকায়।
আমাদের এই ঋতুবৈচিত্র্যের দেশে মৌসুমে মৌসুমে প্রকৃতি থেকেই তুলে আনা হয় পোশাকের মোটিফ আর নকশা। বিশ্ব ফ্যাশনেও এখন ফুলের জয়জয়কার। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের পোশাকেও নানাভাবে ব্যবহার হয়েছে ফুলেল মোটিফ। কয়েক বছর ধরে হাতে আঁকা পোশাকের বেশ কদর বেড়েছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাইমা রহমান বলেন, ‘ক্লাসে যাওয়ার সময় রাস্তার ধারে থোকা থোকা জারুল ফুল দেখতে খুব ভালো লাগে। কয়েক মাস আগে একটা অনলাইন পেইজে হ্যান্ড পেইন্টিংয়ের জারুল ফুলের ফতুয়া দেখেই অর্ডার করে দিলাম। সপ্তাহে চার দিন ক্লাস, টিউশন, গ্রুপ স্টাডি মিলিয়ে বেশ দৌড়ঝাঁপ করে চলতে হয়। পোশাকে তাই স্বাচ্ছন্দ্যকেই প্রাধান্য দিই। জারুলের সেই ফতুয়ার পর অপরাজিতা, কৃষ্ণচূড়া আঁকা কুর্তি আর লং শার্টও নিয়েছি। মৌসুমি ফুলের পোশাক পরতে ভালোই লাগে। ’
আঁকাকে নেশা ও পেশা হিসেবে নিয়েছেন অনলাইন শপ রংধনু ক্রিয়েশনের ডিজাইনার শাহনাজ সুলতানা। তিনি বলেন, ‘ফুল খুব ভালো লাগার জিনিস আর পেইন্টিং ভালোবাসার। এ দুইয়ে মিলে তৈরি হয় আমার ডিজাইন। মৌসুমের ওপর অবশ্য ফুল নির্বাচনের বিষয়টি নির্ভর করে। যেমন এখন বর্ষা আর শরতের ফুল মাথায় রেখে পোশাকের থিম সাজাচ্ছি। আর যে ফুলই বাছাই করি, চেষ্টা করি যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে আঁকার। যেন প্রথম দেখায়ই বলে দেওয়া যায় সেটি কী ফুল। পোশাকের কাটিংয়ের ক্ষেত্রে তরুণদের পছন্দকে প্রাধান্য দিই। আর ওয়েস্টার্ন পোশাক হলেও দেশি ফুল আর ফ্যাব্রিকস দিয়ে ষোলো আনা দেশি লুক আনার চেষ্টা করি। ’
বাজার ও অনলাইন শপ ঘুরে দেখা যায়, হাতে আঁকা পোশাকে মৌসুমি ফুলের ছড়াছড়ি। সোনালু, জারুল, কৃষ্ণচূড়া, কদমের পাশাপাশি কচুরি, কলমি, অপরাজিতা, ঝুমকোলতা, দোলনচাঁপার মতো জনপ্রিয় ফুল আঁকা হচ্ছে। কামিজ ও শাড়ি তো রয়েছেই। সঙ্গে শার্ট, টপস, স্কার্ট বা গাউনের মতো পাশ্চাত্য পোশাকেও রংতুলির ছোঁয়ায় মানিয়ে যাচ্ছে দেশীয় যত ফুল। ছেলেদের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট আর ক্যাজুয়াল শার্টেও ফুল আঁকছেন অনেকেই। আবার অনেকেই ফুলেল মোটিফে যুগল পোশাক বা পারিবারিক পোশাক অর্ডার দিয়ে করিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান শাহনাজ সুলতানা। সুতি, সিল্ক, হাফ সিল্ক, মসলিন, এন্ডি সিল্ক ফ্যাব্রিকসকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। অনলাইন শপ চারকোলের ডিজাইনার ফোয়ারা ফেরদৌস বলেন, ‘প্রায় সব ধরনের ফ্যাব্রিকসেই হ্যান্ড পেইন্ট করা গেলেও রঙের স্থায়িত্ব বিবেচনায় সুতি ও পিওর সিল্ক ফ্যাব্রিকসকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। সুতি ছাড়া অন্য কোনো ফ্যাব্রিকসে রঙের স্থায়িত্ব চাইলে পানি থেকে সাবধান থাকা ভালো। ’ এ ক্ষেত্রে ড্রাই ওয়াশ করে নেওয়া উচিত।
অনলাইন শপ ঈহার ডিজাইনার মৌরী নাজনীন হাতে আঁকা পোশাকের যত্ন সম্পর্কে বলেন, ‘রেগুলার ব্যবহারের সুতির পোশাক সফট ডিটারজেন্ট দিয়ে হালকা হাতে ধুয়ে নেওয়া যায়। সিল্ক বা মসলিনের ক্ষেত্রে ড্রাই ওয়াশ করার পরামর্শই দেব। এ ছাড়া হ্যান্ড পেইন্ট করার পর প্রথমবার ব্যবহারের আগে পোশাক উল্টো করে রোদে শুকিয়ে নিলে রং দীর্ঘস্থায়ী হবে। ঘাম না হলেও প্রতিবার ব্যবহারের পর খোলা বাতাসে বেশ কিছুক্ষণ পোশাক মেলে রাখুন। তারপর কেবিনেটে রাখুন। আর হাতে আঁকা পোশাক আয়রন করার সময়ও উল্টে নেওয়া ভালো। ’
তুলিতে আঁকা ফুলেল পোশাকের জন্য বেশ কিছু অনলাইন শপ রয়েছে। ঈহা, রংধনু ক্রিয়েশন, গুটিপোকা, চারকোল, প্রজাপতি, কিংশুকসহ আরো অনেক। হাতে ধরে পোশাক কিনতে চাইলে যেতে পারেন শামুক ফ্যাশন ঘরে। ধানমণ্ডিতে তাদের আউটলেট আছে। এ ছাড়া পিরান, কৃতি, দোয়েল সিল্ক, উষা সিল্ক ও আজিজ সুপার মার্কেটের বেশ কিছু শোরুমে পাবেন হাতে আঁকা ফুলেল পোশাক। পোশাকের দাম নির্ভর করে ফ্যাব্রিকস ও পেইন্টের কোয়ালিটির ওপর। কাস্টমাইজড অর্ডারের ক্ষেত্রে ডিজাইনাররা ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাব্রিকস, ডিজাইন ও দাম ঠিক করেন। সাধারণত শাড়ি দুই হাজার থেকে শুরু হয়ে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। মেয়েদের কামিজ, টপস, কুর্তা বা স্কার্ট পাবেন এক হাজার ৮০০ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। ছেলেদের টি-শার্ট, পাঞ্জাবি বা শার্ট পাবেন ৮০০ থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে।