মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার জন্য এখন প্রয়োজন নিরাপদ আশ্রয়, বাসস্থান। তবে এখন তারা যে পরিবেশে থাকছে, তাতে তাদের বিভিন্ন ধরনের ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে।
কথাগুলো বলছিলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মুহাম্মাদ মুসা।
সুদান, ইথিওপিয়া, উগান্ডা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে শরণার্থীদের জন্য নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচিতে কাজ করার ৩২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে ডা. মুহাম্মাদ মুসার। এ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় যেসব কর্মসূচি নিয়েছেন তা তুলে ধরেন রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখে আসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ডা. মুহাম্মাদ মুসা বলেন, এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এটি করতে না পারলে সেখানে ছোঁয়াচে রোগ ছড়িয়ে পড়ে মানবিক বিপর্যয় ঘটাবে।
অপুষ্টির শিকার মা ও শিশুরা
ডা. মুহাম্মাদ মুসা বলেন, রোহিঙ্গাদের শতকরা আশি ভাগই প্রসূতি মা ও শিশু। অনেকে গর্ভবতী। গর্ভবতীদের স্বাস্থ্য খুবই নাজুক। শিশুরা অপুষ্টির শিকার।
তাদের কাউকেই কোনো ধরনের প্রতিষেধক বা টিকা দেয়নি মিয়ানমার সরকার। অনেকেই ভুগছে যক্ষা রোগে। অপুষ্টিতে ভোগা নারী ও শিশুরা এখন হাম ও নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ডা. মুসা বলেন, ‘আমরা ৬০টি ভ্রাম্যমাণ বা মোবাইল ক্লিনিক খুলেছি। প্রতিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন অন্তত ১০০ জন রোগী সেবা পাচ্ছে। পাশাপাশি ব্র্যাক ডাক্তারদের ১০টি টিম কাজ করছে। ওই ডাক্তাররা শুধু প্রসূতি মা ও শিশুদের সেবা দিচ্ছেন। তাদের অনেকেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তবে এখন পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার কোনো রোগী আমরা পাইনি। এটি ভালো দিক। ’
ডা. মুসা বলেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে। এটি সাধুবাদ পাওয়ার মতো একটি উদ্যোগ। এতে সরকার যদি ব্র্যাক বা বেসরকারি কোনো সংস্থাকে যুক্ত করতে চায়, তাহলে দ্রুতগতিতে টিকাদান কর্মসূচি সম্পন্ন করা যাবে।
সুপেয় পানি ও টয়লেট
রোহিঙ্গাদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও টয়লেট স্থাপনের পরিকল্পনা তুলে ধরে ডা. মুহাম্মাদ মুসা বলেন, এ দুটি নিশ্চিত না হলে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়বে, শুরু হবে মহামারি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্র্যাক এক হাজার ১২০টি টিউবওয়েল বসাবে, স্থাপন করবে ১৫ হাজার টয়লেট।
বাচ্চাদের জন্যও আছে ব্যবস্থা
ডা. মুহাম্মাদ মুসা বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য ৬০টি ‘চাইল্ড ফ্রেন্ডলি জোন’ স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে ব্র্যাক। এসব জোনে থাকবে মিয়ানমারের সিলেবাসে শিক্ষার ব্যবস্থা। এর জন্য রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে বাছাই করে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ব্র্যাক। একেকটি জোনে গড়ে ৬০০ বাচ্চা থাকতে পারবে।
ডা. মুসা বলেন, সরকার যেসব কর্মসূচি নিচ্ছে, তার অংশ হিসেবেই ব্র্যাক কাজ করবে। ব্র্যাক চায় এই শিশুরা একদিন মিয়ানমারে ফিরে যাবে। এ কারণে মিয়ানমারের ভাষা ও শিক্ষা কারিকুলামে তাদের পড়ানো হবে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রগ্রাম ও ইউনিসেফের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। শিশুদের কল্যাণে ও তাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় কী ধরনের খাবার দেওয়া যায় তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে ব্র্যাক।