‘ইমাজিন টাইগার’ সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ উন্নয়নে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে সব ধরনের অর্থনীতি সূচকে। ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির উন্নয়নে ৭৭ বছরে পাকিস্তান যা অর্জন করতে পারেনি, ৪৭ বছরে তা পেরেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চুড়ান্ত প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, সব বৃত্ত ভেঙে রেকর্ড পরিমাণে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ফলে মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেড়ে জিডিপি অর্জিত হয়েছে সাত দশমিক ২৮ শতাংশ। বর্তমানে পাকিস্তানের জিডিপি’র গড় প্রবৃদ্ধি ৪.৯১ শতাংশ।
দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন যে, বেশ কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশ মানব উন্নয়নের নানা সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। বাকি ছিল শুধু মাথাপিছু জিডিপি। এবার এক্ষেত্রেও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ ।
পাকিস্তান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভে মোতাবেক ১৯৬৮ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ৯৯ দশমিক ৮০ ডলার। আর পূর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৪০ ডলার। অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় তখন পূর্ব পাকিস্তানের আড়াই গুণ বেশি ছিল। ৪৭ বছর পর অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক মাথাপিছু জিডিপির প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানকে চূড়ান্তভাবে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
সবশেষ তথ্য মতে, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় এক লাখ ২৮ হাজার ৮০০ টাকা। এর ফলে জিডিপি’র আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখন পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় এক হাজার ৪৭০ মার্কিন ডলার।
দেশ স্বাধীনের পর জিডিপি’র আকার ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াতে যেখানে সময় লেগেছিল ৩৪ বছর, সেখানে এ অর্জন রেকর্ড পরিমাণ। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬৭১ টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এটি আমাদের নতুন ইতিহাস। ২০১৯ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আট শতাংশের ওপরে যাবে। আশা করছি, ২০৩০ সালের মধ্যে এ হার নয় থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে থাকবে। তাহলেই আমরা আমাদের ২০৪১ সালের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো। বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্ট অনুযায়ী ১২ শতাংশ দরিদ্রতা কমিয়ে আনতে পেরেছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার।
সবশেষ আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের জনসংখ্যা এখন ২০ কোটি ৭৮ লাখ, যা দেশটির জনসংখ্যা নিয়ে আগের যে ধারণা ছিল তার চেয়ে ৯০ লাখ বেশি। পাকিস্তানের জনসংখ্যার নতুন এ তথ্য হয়তো দেশটিকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম জনবহুল দেশে পরিণত করেছে, তবে এই সংখ্যা তাদের মাথাপিছু জিডিপিকে ৪-৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। আর এতে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশকে।
মাথাপিছু জিডিপিতে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলাকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। ১০ বছর ধরেই বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে ছয় শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে, যা গত দুই বছরে সাত শতাংশ ছাড়িয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মলগ্নে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল মাত্র ৬-৭ শতাংশ। বর্তমানে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ২৯ শতাংশ।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রতি বছর ইনক্লোসিভ ইকোনমিক গ্রোথ ইনডেক্স নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০১৬ সালের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় চলতি বছর সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সূচকে ভারত ও পাকিস্তান থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ১৬ ধাপ এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সামগ্রিক উন্নয়নের মানদণ্ডে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬তম। অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ ভারতের অবস্থান ৬০ এবং পাকিস্তানের ৫২তম।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকেও ভারত-পাকিস্তান থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের করা এই তালিকায় বাংলাদেশ ৯০তম স্থানে। দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে ভারত (১০০), পাকিস্তান (১০৬) ও আফগানিস্তান (১০৭)।
আইএমএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পিপিপি জিডিপি হবে ৬৮৬ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২২ সালের মধ্যে তা এক হাজার বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আইএমএফ বলেছে, নামমাত্র জিডিপির ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৫তম হলেও ২০২২ সালের মধ্যে এ অবস্থান ৩৮-এর মধ্যে হবে। এর আগে বৃটেনভিত্তিক বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটার হাউসকুপারসের (পিডব্লিউসি) বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলেছিল যে, ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতা (পিপিপি) বিচারে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৩তম বড় অর্থনীতির দেশ।