ব্রিটিশ এক দম্পতি মাত্র ১০ দিনের জন্যে বেড়াতে গিয়েছিলেন ভারতের কেরালায়, কিন্তু তারা আর ফিরে আসেননি এবং সেখানকার একদল কুকুরের পেছনে তারা খরচ করেছেন তাদের নিজেদের জমানো তিন লাখ পাউন্ড।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের আগেই চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছিলেন এই ব্রিটিশ দম্পতি স্টিভ ও ম্যারি। তারপর কথা ছিল তারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াবেন।
গ্র্যান ক্যানারিয়ার ঘোরার পর তারা এসেছিলেন দক্ষিণ ভারতের রাজ্যে। ওই রাজ্যের কোভালাম শহরে তারা দু’সপ্তাহের জন্যে একটি হলিডে বুক করেছিলেন। সেখানে দু’সপ্তাহের জন্য গেলেও তারা আর ফিরে যাননি। তারপর সেখানে তাদের ১০ বছর কেটে গেছে। কারণ তারা তাদের চোখে পড়েছিল দুটো কুকুরকে। এবং কুকুরদুটোর প্রতি তাদের এতো মায়া তীব্র হয়েছিল যে, তারা সে দু’টোকে দেখাশোনা শুরু করেছিল।
এখন তাদের আছে একশোটির মতো কুকুর। প্রাণীদের জন্যে তারা একটি ক্লিনিকও পরিচালনা করেন। বেওয়ারিশ কুকুর দেখভাল করার জন্যে তারা একটি সংস্থাও গড়ে তুলেছেন যাদের কাজ রাস্তা থেকে অসুস্থ কুকুর তুলে এনে তাদেরকে খাওয়ানো, টিকা দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু এই দম্পতির প্রথম লক্ষ্য ছিল চাকরি বাকরি ছাড়াই জীবনটা কেমন চলে সেটা দেখার। “আমরা তো মাত্র দু’সপ্তাহের জন্যে এখানে বেড়াতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দুটো কুকুরের বাচ্চার প্রেমে পড়ে গেলাম।”
স্টিভ বলেন, “তারপর তো সবকিছু বদলে গেল। দুটো কুকুর থেকে ছ’টি কুকুর হলো। তারপর হলো ১২টি। এভাবে বাড়তেই লাগলো।”
শহরের সবাই তখন জেনে গেল এই দম্পতির কথা। রাস্তা থেকে তারা তো কুকুর কুড়িয়ে আনতেনই, লোকজনও এই দম্পতির বাড়ির দরজার সামনে কুকুর রেখে যেতে শুরু করলেন। স্টিভ জানান, একবার তারা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতরে ছ’টি কুকুরের বাচ্চা পেয়েছিলেন।
এভাবেই বদলে গেল এই দম্পতির জীবন। দিন রাত তাদের কাজ হয়ে গেল রাস্তা থেকে অসুস্থ কুকুর বাড়িতে নিয়ে আসা, খাওয়ানো এবং চিকিৎসা করা।
এই দম্পতি বলছেন, কেরালার এসব কুকুরের পেছনে তারা নিজেদের জমানো তিন লাখ পাউন্ড খরচ করে ফেলেছেন। অর্থ সংগ্রহের জন্যে তারা মাঝে মাঝে অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। বহু পরিবার, বন্ধু এবং পর্যটকও তাদেরকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন।
যেসব কুকুর সুস্থ তাদেরকে জীবাণুমুক্ত করে আবার রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। শুধুমাত্র অসুস্থ কুকুরকেই নিয়ে আসা হয় তাদের আশ্রয়ে।
“আমি আমার আত্মীয় স্বজনকে মিস করি, মিস করি বন্ধুদের, ইংলিশ ব্রেকফাস্ট, খাবার দাবারও মিস করি। আরও মিস করি পাব এবং ফুটবল নিয়ে টিভি অনুষ্ঠান ম্যাচ অফ দ্যা ডে,” বলেন স্টিভ।
“তবে ভালো কিছু দিকও আছে। যেমন এখানে আমাকে গাড়ির কাঁচে জমা বরফ পরিষ্কার করতে হয় না। ঠাণ্ডায় ঘর গরম করার জন্যে বাড়তি বিলও গুণতে হয় না।”
“৬০ বছর বয়সে যেরকম থাকা যায় সেই হিসেবে আমি খুশি,” বলেন তিনি।-বিবিসি