রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’র দফতর বিষয়ক মন্ত্রীকে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে মিয়ানমার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে দক্ষিণ এশীয় সংবাদমাধ্যম সাউথ এশিয়ান মনিটর জানিয়েছে, মিয়ানমারের মন্ত্রী উ কিয়া তিন্ত সোয়ে রোববার (১ অক্টোবর) রাতে ঢাকা আসবেন। সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।
গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উ উইন মিত আয়ে জানিয়েছিলেন, সু চির দফতর বিষয়ক মন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার জন্য ঢাকা আসবেন । আর বৃহস্পতিবার নির্বাসিত রোহিঙ্গা অ্যাকটিভিস্টদের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী জানায়, মিত আয়ে রাখাইনের মংডু এলাকায় ‘যত দ্রুত সম্ভব’ রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন ও পুনর্বাসন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সাউথ এশিয়ান মনিটর জানিয়েছে, রোহিঙ্গারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন, সেই কক্সবাজারে তার সফরের কোনও পরিকল্পনা নেই। সাউথ এশিয়ান মনিটরকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, তিনি “একটাই বৈঠক করবেন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে।” কিয়া তিন্ত সোয়ে সোমবারই ঢাকা ছাড়বেন বলে জানান তিনি।
২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তখন থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। ওই সহিংসতা থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত ৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষের পালিয়ে আসার কারণ অনুসন্ধান করতেই জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দলের সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। তবে জাতিসংঘের সেই অনুসন্ধানী দলকে রাখাইনে প্রবেশ করতে দেয়নি মিয়ানমার। ডি ফ্যাক্টো সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের পরিকল্পিত এই সফর বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই খবর নিশ্চিত করেছে। ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন, সফর বাতিলের কোনও কারণ জানায়নি মিয়ানমার।
ওই অনুসন্ধানী দল মিয়ানমারে প্রবেশ করতে পারলে ২৫ আগস্টের রাখাইন সহিংসতার পর সেটাই হতো জাতিসংঘের প্রথম সফর। সেই সহিংসতার পর সেনাবাহিনী অভিযান জোরালো করার পাশাপাশি জাতিসংঘের ত্রাণ কর্মীদের জোরপূর্বক রাখাইন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। এবার তদন্ত দলকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ইয়াঙ্গুনে জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, কোনও কারণ ছাড়াই নির্ধারিত ওই সফর বাতিল ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ইতোমধ্যে ‘জাতিগত নির্মূলের পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত আখ্যা দিয়েছে। মহাসচিব প্রশ্ন তুলেছেন দুই তৃতীয়াংশ মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হলে তাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ ছাড়া আর কী নামে ডাকা হবে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণকে রোহিঙ্গা তাড়ানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগও এনেছে জাতিসংঘ। তবে কোনভাবেই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সেখানে প্রবেশাধিকার দিচ্ছে না তারা।