আসামের নাগরিক পঞ্জিকরণ নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ হানলেন পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতে সোমবার কনস্টিটিউশ ক্লাবে বিশপদের একটি অনুষ্ঠানে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ওরা। তাঁর প্রশ্ন, “খ্রিস্টান, মুসলিম, দলিত হলেই আলাদা করা হচ্ছে কেন”? কেন্দ্রের এই আচরণ একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে দাবি করে প্রত্যয়ী মমতা এদিন জানিয়ে দেন, “বাংলায় এসব হতে দেব না”। আসামে নাগরিক পঞ্জিকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে যখন দেশ জুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে, ঠিক সে সময়ই পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, বাংলায় ক্ষমতায় এলে এ রাজ্যেও একই রকম পদক্ষেপ করা হবে।
আসাম ইস্যুতে সংসদে তৃণমূলের প্রতিবাদে সামিল হয়েছে অন্যান্য বিরোধী দল। এনআরসি থেকে ৪০ লক্ষ নাম বাদ যাওয়ায় আজ অধিবেশন শুরুর আগে গান্ধীমূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রতিবাদে যোগ দেয় সমাজবাদী পার্টি ও আপ। এনআরসি ইস্যুতে আলোচনা চেয়ে আজ ফের রাজ্যসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনে তৃণমূল। চেয়ারম্যান তা খারিজ করায় শুরু হয়ে যায় হই-চই। মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভার অধিবেশন।
নাগরিকত্ব বিতর্কে আসাম জুড়ে আশঙ্কার মেঘ। এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়ায় একই পরিবারের কারও নাম আছে, কেউ আবার বাদ পড়েছেন। পরিবার ভাঙার আশঙ্কায় চাপা আতঙ্ক গুয়াহাটি জুড়ে। তালিকায় বাদ পড়েছেন খোদ নাগরিক সুরক্ষা কমিটির সেক্রেটারি শেখর দে-র নাম। যদিও তালিকায় তাঁর স্ত্রী ও এক মেয়ের নাম রয়েছে। একই ছবি গুয়াহাটির একাধিক পরিবারে। একই কাগজের ভিত্তিতে কেন দু’রকম সিদ্ধান্ত? প্রশ্ন তুলছেন আসামবাসী।
সোমবার আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু ঠিক কিসের ভিত্তিতে ৪০ লক্ষ মানুষকে নাগরিক পঞ্জির বাইরে রাখা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনা হয়নি। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, এটা খসড়া মাত্র, যেখানে সংশোধন করা যাবে ও সংশোধনের জন্য নতুন করে আবেদন করাও যাবে। বলা হয়েছে, উপযুক্ত নথিপত্র থাকলে কারও নাগরিকত্ব নিয়ে সমস্যা হবে না।
এদিকে আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি কর্মসূচীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ড সরকারও এনআরসি নবীকরণের জন্য আসাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ইতিমধ্যেই দুই রাজ্যে প্রতিনিধিরা বিষয়টি বুঝতে আসামে হাজির হয়েছেন। তবে আসামের এই ৪০ লক্ষ মানুষকে যদি দেশ বহিঃর্ভুত ঘোষণা করা হয়, তবে এটাই হবে বিশ্ব ইতিহাসে সর্বাধিক উত্খাতের ঘটনা।