ফিরে এল ভ্যান চাপা দিয়ে মারার আতঙ্ক। নিস, বার্সেলোনা, লন্ডনের পরে এ বার টরন্টোর ফুটপাতে। ঘাতক পিষে মারল দশ জনকে। আহত ১৫। টরন্টো পুলিশ প্রধান মার্ক সন্ডার্স জানান, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা। ২৫ বছরের আততায়ী অ্যালেক মিনাসিয়ানকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
গত কাল আপৎকালীন নম্বর ৯১১-এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছয় পুলিশ। তার পরেই অন্টারিওর রিচমন্ড হিল-এর বাসিন্দা অ্যালেককে গ্রেফতার করা হয়। ভাড়া করা একটি সাদা ভ্যান নিয়ে হামলা চালিয়েছিল সে। স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টায় ফোন আসে পুলিশের কাছে। বলা হয়, টরন্টোর ইয়ঞ্জ স্ট্রিটে পথচারীদের উপরে চড়াও হয়েছে একটি সাদা ভ্যান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান শুনে পুলিশ প্রধান সন্ডার্স পরে জানান, ইয়ঞ্জ স্ট্রিট এবং ফিঞ্চ অ্যাভিনিউয়ে ব্যস্ত সংযোগস্থলে ভ্যান নিয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়েছিল। ইচ্ছে করেই ভুল পথে ঢুকে টানা দু’কিলোমিটার পথ ভ্যান নিয়ে ছুটেছে অ্যালেক। কখনও ফুটপাতে উঠেছে, কখনও সে আবার রাস্তা থেকেই ধাক্কা মেরেছে। এখনও পর্যন্ত এই হামলার সঙ্গে সন্ত্রাসের যোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে দাবি পুলিশের।
তবে তাকে কাবু করতে গিয়ে গুলি চালাতে হয়নি পুলিশকে। একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, অ্যালেক পুলিশের দিকে কিছু একটা তাক করে বলছে, ‘‘আমাকে মারো!’’ পুলিশ তাকে শান্ত ভাবে ভ্যান থেকে নেমে আসতে বলে। তখন অ্যালেক বলছে, ‘‘আমার কাছে অস্ত্র আছে।’’ পুলিশ অফিসার নিরুত্তাপ ভাবে বলেন, ‘‘আমার তাতে কিছু যায় আসে না। নেমে এসো।’’ এ ভাবেই গুলি না চালিয়ে অ্যালেককে ধরে ফেলে পুলিশ। এ জন্য পুলিশের যথেষ্ট প্রশংসাও করা হয়েছে।
আজ টরন্টোর মেয়র জন টোরি বলেছেন, ‘‘এখন একসঙ্গে থাকার সময়। আমরা কী ভাবে বেঁচে আছি বা আমরা কারা— এই ধরনের দুর্ঘটনা যেন কখনওই তার প্রতিফলন না হয়ে ওঠে।’’ শোক জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রু়ডো। ‘‘মর্মান্তিক এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন হামলা’’ বলে তিনি আখ্যা দিয়েছেন এই ঘটনাকে। হোয়াইট হাউসও কানাডার মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সিগারেট কিনতে বাইরে বেরিয়ে তিনি ‘দামাল’ ভ্যানটিকে দেখতে পান। ইয়ঞ্জ স্ট্রিট এবং ফিঞ্চ অ্যাভিনিউয়ের মোড়ের কাছ দিয়ে তখন যাচ্ছিলেন এক পথচারী। ভ্যান ধাক্কা মারে তাঁকে। প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘এর পরে যেন বাঁধ ভেঙে গেল। ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে ছুটছিল ভ্যান। পাগল পাগল অবস্থা।’’ আর এক প্রত্যক্ষদর্শী ওখানে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এলোমেলো ভ্যানটা এগিয়ে আসতে দেখে ভেবেছিলেন চালক বুঝি হৃদ্রোগে আক্রান্ত! ওই চত্বরে কাবাবের দোকান চালান বেরসাত নুরাই। তার সামনের বেঞ্চে ধাক্কা মারে ভ্যান। নুরাই বাইরে পালান। দেখেন, মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে দু’তিন জন। চার দিকে ধ্বংসের চিহ্ন।
মৃতদের মধ্যে সবার পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এক মহিলা রয়েছেন, নাম অ্যান-মেরি দামিকো। তিনি মার্কিন বীমা সংস্থার কর্মী। ইয়ঞ্জ স্ট্রিটে তাঁর অফিস। দক্ষিণ কোরিয়ার বিদেশ মন্ত্রীর দাবি, তাদের দুই নাগরিকও মৃতের তালিকায় আছেন।